× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাঙামাটিতে এক ইউনিয়নে ৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

রিকোর্স চাকমা, রাঙামাটি

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩ ১০:৫৮ এএম

আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৩ ১৪:২৭ পিএম

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের বাড়িঘর। প্রবা ফটো

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের বাড়িঘর। প্রবা ফটো

টানা ভারী বৃষ্টির মধ্যে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়ন। বন্যায় এই ইউনিয়নে বাজার, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সাময়িক দুর্ভোগ কেটে গেলেও তারা এখন দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগে পড়েছেন।

বন্যায় ফারুয়া ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার পানিতে অনেকের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। নিরাপদ আশ্রয় তৈরি এখন তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই ইউনিয়নে অন্তত ১৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণ সহযোগিতা পেলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বন্যায় এই ইউনিয়নে ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ১ হাজার ২৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে ৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, পাড়াকেন্দ্রসহ ৩৩টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ফারুয়া ইউনিয়নে ৩০ মেট্রিক টন চাল, ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ দেড় লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ইউনিয়নের পাংখোয়া পাড়া, যমুনাছড়ি বমপাড়া, তক্তানালা, একুজ্জ্যাছড়ি, ফারুয়া বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হয়েছে ক্ষতচিহ্ন। বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি, দোকানপাট মেরামতের কাজ করছেন অনেকে। অনেকের আবার ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ায় অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করে বা স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও হাঁটুসম কাদা।

তক্তানালা উত্তর পাড়ার বাসিন্দা বরুন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘বন্যার কারণে আমাদের বাড়িঘর, ফসলি জমি সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমাদের কিছু নাই, সব বন্যায় ভেসেয় গেছে। আমাদের প্রতি সরকার যদি সুদৃষ্টি দেয় তাহলে আমাদের খুব উপকার হবে।’

যমুনাছড়ির বমপাড়ার হেডম্যান পালম বম বলেন, ‘এই পাড়ায় ১০০টি পরিবারের মধ্যে ৪৮টি পরিবার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি ঘরে এখনও কোমর পর্যন্ত মাটি জমে আছে। আর বন্যার পানিতে একেবারে ঘর ভেসে গেছে এ রকম পরিবার আছে ১১টি। তাদের আমরা কিছু সহযোগিতা করেছি আর সরকার থেকে ১০ কেজি করে চাল পেয়েছে। আমাদের আরও সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।’

ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অরূপ বড়ুয়া বলেন, ‘বন্যায় আমাদের বিদ্যালয়টি আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছিল। যার কারণে আমাদের বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চার-পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। বন্যায় যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

ডুবে গেছে ফারুয়া বাজার

ফারুয়া ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা রাইংখ্যং নদীর পাশে ফারুয়া বাজার। গত আট দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে তছনছ হয়ে গেছে বাজারের ১৮২টি দোকান, যার আনুমানিক ক্ষতি প্রায় ১০ কোটি টাকা।

ফারুয়া বাজারের দোকানি রহমত আলী বলেন, ‘আমার জীবনে এ রকম বন্যা দেখি নাই। এটা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। বাজারের প্রায় সব দোকান ডুবে গেছে। দোকানের কোনো মালামাল রক্ষা করতে পারি নাই। যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সরকারি সহায়তা ছাড়া আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।’

ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ৬ ও ৭ আগস্ট বন্যার পানিতে প্লাবিত ছিল আমাদের ইউনিয়ন। আমি নিজে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বন্যার যে ভয়াবহতা দেখেছি ২০১৭ সালের চেয়েও এই বন্যা বেশি ভয়াবহ ছিল। আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে। জেলা প্রশাসন থেকে ফারুয়া ইউনিয়নে ৩০ মেট্রিক টন খাদ্য দেওয়া হয়েছে। আমাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বন্যায় ফারুয়া ইউনিয়নে ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফারুয়া বাজারটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ফারুয়া ইউনিয়নে ৩০ মেট্রিক টন চাল, ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ দেড় লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা