সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩ ০৮:২৯ এএম
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৩০ পিএম
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার মুমুরদিয়া গ্রামে জাল মেরামতে ব্যস্ত যুবকরা। প্রবা ফটো
মাছ ধরার প্রধান উপকরণ জাল। করে হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, নদী-নালাসহ যেকোনো জলাধারে মাছ ধরতে জালের ওপর নির্ভর করেন জেলেরা। আধুনিক এই যুগেও এর বিকল্প বের হয়নি বললেই চলে। এর ফলে জালের ওপর ভরসা করেই জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকেই।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার উত্তর মুমুরদিয়া গ্রামে এরকভাবেই জালে জড়ানো জীবন গড়েছেন দুই শতাধিক যুবক। যারা জাল বোনা, মাছ ধরা ও জাল ভাড়া দিয়ে ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা।
সরেজমিন গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি বসে ছয়-সাত জনের দল মিলে জাল তৈরি করছেন। অনেকে আবার কিছু জাল ঝুলিয়ে যে জায়গাটুকু ছিঁড়ে গেছে বা ছিদ্র হয়ে আছে, সে অংশটুকু মেরামত করছেন। মাছ ধরার প্রস্তুতিতে রাখছেন না কোনো ত্রুটি।
জাল মেরামতকারী রফিক মিয়া, আলাউদ্দিন ও হারিস মিয়া জানান, তারা নিজেরাই জালের মালিক। এরকম ৮টি জাল রয়েছে তাদের। একেকটি জালের মূল্য ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারা মাছ ধরার পাশাপাশি নিয়মিত জাল ভাড়াও দিয়ে থাকেন।
তারা আরও জানান, প্রতিটি জালের ভাড়া বাবদ ২৫০ বা ৪০০ টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া জাল দিয়ে মাছ ধরলে প্রতিদিন পারিশ্রমিক বাবদ মেলে আরও ৪৫০ বা ৫৫০ টাকা। দুভাবেই তাদের আয় করার সুযোগ থাকে। জালের অপর এক মালিক শহীদ মিয়া বলেন, আমার ৪টা জাল আছে। এগুলো ভাড়া দিয়েই আয় করি। মাছ ধরতে আমার যাওয়া হয় না বললেই চলে।
প্রতিদিন ভোরে একটি দল করে বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে। সরাসরি পৌঁছে যায় আগের দিনের চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত জলাধারে। একেকটি দলে ৪ থেকে ১০ জন করে লোক থাকে। জাল মেরামতকারী কাসেম মিয়া জানান, শুধু এলাকায় নয়, ‘মাছ ধরার জন্য তারা নিজের উপজেলা ছাড়াও গফরগাঁও, শ্রীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, ভৈরব, তাড়াইল, হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলায় যান।
যুবক রফিক মিয়া জানান, তাদের একটি সমিতি রয়েছে। এর মাধ্যমে পরস্পর সহযোগিতার চেষ্টা করা হয়। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকেও তারা মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তবে সরকারিভাবে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করা গেলে আরও বড় পরিসরে সুফল মিলত বলে জানান তিনি।
জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ডা. কৃষিবিদ রিপন কুমার পাল বলেন, তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবস্থাপনায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এ ব্যাপারে তাদেরকে সরকারি কোনো সহায়তা দেওয়ার সুযোগ আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। এসব যুবকদের স্বাবলম্বী করতে এরই মধ্যে বেশকিছু প্রস্তাব তৈরি করেছি। এগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে পদক্ষেপ নেব।