শরীয়তপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩ ১৯:১০ পিএম
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৪৬ পিএম
হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে নিবিড়ের স্বজন ও এলাকাবাসী শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন। প্রবা ফটো
শরীয়তপুরের শিশুকানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হৃদয় খান নিবিড় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিন আসামি।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, বাইক (মোটরসাইকেল) কেনার টাকা জোগাতে হৃদয়কে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির পরিকল্পনা করেন তারা। অপহরণের পর নিবিড় চিৎকার করলে তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।
বুধবার (২ আগস্ট) শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল হৃদয় খান নিবিড় হত্যার অভিযুক্ত শাওন চৌকিদার, শাকিল গাজীকে পাঁচ দিন ও বয়স কম হওয়ায় এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় সিয়ামকে রিমান্ড দেওয়া হয়নি।
রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সিয়াম, শাকিল গাজী ও এক কিশোর। এ ঘটনার আরেক আসামি শাওন চৌকিদার এখনও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। আসামিদের মধ্যে তিনজনকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে এবং ওই কিশোরকে গাজীপুরের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও এলাকার প্রবাসী মনির হোসেন খানের ছেলে হৃদয় খান নিবিড়কে ৩১ জুলাই অপহরণ করে হত্যা শেষে মাটিচাপা দেওয়া হয়। এরপর তার মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনা পুলিশকে জানালে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চারজনকে আটক করে। আটককৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১ আগস্ট ভোরে খিলগাঁও এলাকার মেসার্স খান ব্রিকসের পাশের একটি নির্জন স্থান থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম জানান, নিবিড়দের বাড়িতে আট বছর ধরে ভাড়া থাকতেন সিয়াম। এই সুযোগে সিয়ামের সঙ্গে নিবিড়দের সখ্যতা গড়ে ওঠে। সিয়াম বালু-মাটি পরিবহনের একটি ডাম্প ট্রাকের চালক ছিলেন। নিবিড় ওই ট্রাকে উঠে ঘুরতে পছন্দ করত। নিবিড়কে নিয়ে সিয়াম, তার সহযোগী শাকিল গাজী ও ওই কিশোর প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যেত।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, জবানবন্দিতে আসামিরা বলেছেন, সিয়াম একটি মোটরসাইকেল কেনার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তার কাছে টাকা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে সিয়াম তার সহযোগীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা পরিকল্পনা করেন, নিবিড়কে আটকে রেখে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ জুলাই বিকালে নিবিড়কে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ট্রাকে উঠিয়ে নেন সিয়াম। একপর্যায়ে তাকে কীর্তিনাশা নদীর তীরে নিয়ে যান। এরপর সহযোগী শাকিল ও ওই কিশোরকে ডেকে আনেন সিয়াম। শাকিল ও কিশোর আসার পর ট্রাকটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিবিড়কে আটক করার চেষ্টা করলে সে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। তখন তারা নিবিড়ের মুখে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। এরপর ট্রাক থেকে লাশটি নামিয়ে পাশের নির্জন স্থানে ইটভাঁটাসংলগ্ন কীর্তিনাশা নদীর পাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। নিবিড়কে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিবিড়ের মা নিপা আক্তারের ফোনে কল করে ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়।
নিবিড়ের মা নিপা আক্তার বলেন, ’আমাদের বসতবাড়ির একটি ঘরে সিয়ামের পরিবার ভাড়া থাকত। তাদের বাড়ি পাবনার সিংগা এলাকায়। ভাড়াটিয়া হিসেবে সিয়ামের সঙ্গে নিবিড় মিশত। তার সঙ্গে কোথাও গেলে সন্দেহের চোখে দেখত না কেউ। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে এমন কাজ করবে, তা কখনও চিন্তায় আসেনি। আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, ’তিনজন আসামি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা বিচারকের কাছে নিবিড়কে হত্যার বিবরণ ও পরিকল্পনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। আরেক আসামি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। তার বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে পুনরায় তার রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে।’
এলাকাবাসীর বিক্ষোভ-মিছিল
হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে নিবিড়ের স্বজন ও এলাকাবাসী মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন। এই বিক্ষোভে ২ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন।