× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লৌহজংয়ে ট্রলারডুবি

‘চোখের সামনে স্ত্রী ও দুই সন্তান ভাইসা গেল, কিছুই করতে পারলাম না’

তানভীর হাসান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩ ১৯:০৬ পিএম

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩ ২০:১৪ পিএম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ট্রলারডুবিতে স্ত্রী ও দুই সন্তান হারিয়ে আহাজারি করে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রবা ফটো

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ট্রলারডুবিতে স্ত্রী ও দুই সন্তান হারিয়ে আহাজারি করে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রবা ফটো

‘চোখের সামনে স্ত্রী, দুই-দুই সন্তান ভাইসা গেল গা। কিছুই করতে পারলাম না। ওগো মা দুই সন্তানরে বুকের মধ্যে ধইরা রাইখাও বাঁচাইতে পারল না। ওগো মা নিজে বাঁচতে চাইলে ঠিকই বাঁচতে পারত। কিন্তু তার দুই পোলা- দুই নয়ন। ওগো বাঁচাইতে গিয়াই ওগো মা মইরা গেল। আমার সব শেষ হইয়া গেছে, এহন কী লইয়া আমি বাঁচুম। আল্লাহ ওগো লগে আমারে কেন লইয়া গেলা না। আমি আর এই কষ্ট সইহ্য করতে পারতাছি না।’

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পিকনিকের ট্রলারডুবিতে স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে এভাবে আহাজারি করছিলেন সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুরের জাহাঙ্গীর বেপারি। শনিবার (৫ আগস্ট) রাতে পদ্মা নদীর শাখা ডহরী-তালতলা খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় ওই যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত শিশু ও নারীসহ আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও তিন শিশু। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর পেশায় একজন নির্মাণ ঠিকাদার। এলাকার পিকনিকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর বেপারিও একজন। একই গ্রাম থেকে প্রায় ৪৭ জন শিশু, নারী ও পুরুষ মিলে পিকনিকে লৌহজংয়ের মাওয়া পদ্মা সেতু এলাকায় যান তারা। ফেরার পথে শনিবার রাত ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ডহরী-তালতলা খালের রসকাঠি স্থানে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়।

দুর্ঘটনার শিকার ট্রলারে ছিলেন জাহাঙ্গীর বেপারির স্ত্রী এপি বেগম, তাদের ১২ বছর বয়সি ছেলে সাকিবুল ও চার বছর বয়সি সাজিবুল। তারা তিনজনই মারা গেছে। একই দুর্ঘটনায় এপির বড় বোন পপি আক্তারও মারা গেছেন। তবে তার সঙ্গে থাকা স্বামী আফসর দেওয়ান ও তিন বছর বয়সি একমাত্র শিশু আফসিন বেঁচে ফিরেছেন।

রবিবার দুই সন্তানের মরদেহ দাফন করেছেন জাহাঙ্গীর। স্ত্রী ও তার বড় বোনের মরদেহ এখনও মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এদিন জাহাঙ্গীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে চৌকির ওপর মুহ্যমান জাহাঙ্গীর। ময়নাতদন্ত শেষ করে দ্রুত স্ত্রীর মরদেহ আনার জন্য স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। একটু পরপরই আহাজারি করছেন। কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থবোধ করলে তাকে শুইয়ে রাখার চেষ্টা করছেন স্বজনরা। 

জাহাঙ্গীরের পাশেই ছিল তার ১৫ বছরের বড় ছেলে রাফিকুল। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় রাফিকুল। সে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। মাদ্রাসায় থাকায় তার পিকনিকে আসা হয়নি। মা ও ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে সে বাড়ি এসেছে। বাবার পাশে থেকে সান্ত্বনা দিয়ে রাফিকুল বলছিল, ‘বাবা আমি তো আছি। তুমি আমারে নিয়া বাঁচবা।’

সেই রাতের দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সবাই পদ্মা নদীতে গোসল করে ক্লান্ত। সন্ধ্যার আগে ট্রলারে বাড়ির দিকে রওনা দিই। রাত হয়ে যাওয়ায় ট্রলারচালক আলো জ্বালিয়ে দেখছিলেন একটু পরপর। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে আর আলো জ্বালাননি আমাদের ট্রলারচালক।’

তিনি বলেন, ‘উল্টো দিক থেকে আসা বাল্কহেডের কোনো লাইটই ছিল না। ওই পাশ থেকে আলো দেখা যায়নি। মুহূর্তের মধ্যে বিকট একটা শব্দ পেলাম। আমি সে সময় টাকা গুনছিলাম। এরপরই  ট্রলারটি কাত হয়ে ডুবে গেল। আমি আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে করতে তারা পানিতে হারাইয়া যায়।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি এমন হতভাগ্য বাবা– নিজে বেঁচেও দুই সন্তানরে বাঁচাতে পারলাম না। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি কেন তাদের সঙ্গে মরলাম না। তাহলে আজ বেঁচে থেকেও এত কষ্ট পেতাম না।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা