সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৫৬ পিএম
কিশোরগঞ্জের নিকলীর বিরিবাঁধ এলাকায় স্থানীয় যুবকরা হাওরের পানিতে শারীরিক কসরত দেখিয়ে দর্শনার্থীদেরকে আনন্দ দেয়। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে এবার একটু দেরিতে পানি এসেছে। মূলত আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি থেকে নতুন পানি আসা শুরু হয়েছে। তাই ভ্রমণপিপাসুদের আগমনও ঘটেছে এ সময় থেকে। নিকলীর বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রতিদিন শত শত মানুষের কোলাহল থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার তা আরও বেড়ে যায়।
মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে জলমগ্ন বেড়িবাঁধ পরিণত হয় আনন্দ ভুবনে। বেড়িবাঁধকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গেস্ট হাউস, খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অস্থায়ী বিভিন্ন খাবারের দোকান। বেড়েছে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান।
দূর-দূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য মানুষের অনুভূতিÑ এটাই সমুদ্র। এত কাছের সমুদ্রের সৌন্দর্য ফেলে রেখে কোথায় ছিলাম আমরা। বেড়িবাঁধ ছাড়াও এখানে দেখার মতো রয়েছে নিকলীর ছাতিরচরের হিজল বন ও জলাবন। রয়েছে পাহাড় খাঁর মাজার, গুরুই প্রাচীনতম আখড়াসহ নানান ঐতিহাসিক স্থান।
স্থানীয় আফজাল হোসেন, তাজিবুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে মানুষ আসা শুরু করেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ বেড়িবাঁধের সৌন্দর্য দেখতে আসছে। বর্ষার ভরা মৌসুমে বিস্তীর্ণ হাওরের জলরাশির ঢেউ আছড়ে পড়ে নিকলীর বেড়িবাঁধে। কেউ কেউ বিশাল জলরাশিতে জলকেলি খেলায় মত্ত হয়ে নানান কসরত প্রদর্শন করেন। স্থানীয় তরুণরা আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে প্রবাহমান ঢেউয়ে নানা শারীরিক কৌশল দেখান।
বেড়িবাঁধ ও হাওরের সৌন্দর্য দেখতে আসা মানুষের প্রয়োজন মেটাতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ। এ ছাড়া রয়েছে অস্থায়ী মুড়ি, ফুচকা, বুট, বাদাম, চটপটির দোকান। যা স্থানীয় অনেকের বেকারত্ব দূর করেছে। যাতায়াতের জন্য রয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভ্ন্নি যানবাহন।
সম্প্রতি দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের সামনে সমুদ্রসম বিশাল জলরাশি দেখছেন ভ্রমণপিপাসুরা। আনন্দে আত্মহারা মানুষ যেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাচ্ছেন। অনেকেই বারবার আসার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা আলী হোসেন নামে একজন বলেন, ‘মোটরসাইকেলে এখানে এসেছি। জায়গাটি এত সুন্দর, তা জানা ছিল না। তাই গাড়িতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আবার আসব।’
ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে আসা আমজাদ হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘একাধিকবার কক্সবাজার গিয়েছি। বেড়িবাঁধের সৌন্দর্য সেখানকার মতোই। তা ছাড়া খরচ খুবই কম। এক দিনে সবকিছু উপভোগ করে চলে আসা যায়। পরিবারসহ কম খরচে আনন্দ উপভোগ করা যায়, যা দেশের অনেক পর্যটনকেন্দ্রে সম্ভব নয়।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুছ ভূঁইয়া জনি বলেন, ‘বেড়িবাঁধে একবার এলে বারবার আসতে ইচ্ছে হবে। এখানকার নয়নাভিরাম দৃশ্যই তাকে টেনে আনবে। কারণ এখানে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। শুধু লোনা পানির স্থলে মিঠা পানিÑ এতটুকুই পার্থক্য। তাই ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশ থেকে লোকজন প্রতিনিয়ত এখানে আসে। বেড়িবাঁধকে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। এলাকার শত শত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিলা পারভীন বলেন, ‘নিকলী বেড়িবাঁধকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে গড়ে উঠেছে খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের দোকান। থাকার জন্য গেস্ট হাউস, হোটেল রয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাওরের পানিতে না নামার নির্দেশনা রয়েছে। ভালো সাঁতারু ছাড়া হাওরের পানির তোড়ে অনেকেই ভেসে যায়। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিকলী বেড়িবাঁধের বিষয়টি পূর্বে জানা ছিল না। এখানে ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর জানলাম। পরে বেড়িবাঁধ ও হাওরের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়েছি। বেড়িবাঁধ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে একটি ভাসমান দ্বীপ রয়েছে। স্পিডবোটে সেখানে গেলে সাগর ও সেন্টমার্টিনের বিশালত্বকেও হার মানায়। নিকলীকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুললে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কিশোরগঞ্জে ভ্রমণ করার মতো উল্লেখযোগ্য একাধিক দর্শনীয় স্থান থাকলেও ভরা বর্ষায় নিকলীর হাওরের বেড়িবাঁধের অপার সৌন্দর্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের মুগ্ধ করছে। বেড়িবাঁধে গিয়ে সত্যি অভিভূত হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বেড়িবাঁধের উন্নয়ন ও পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’