বন্ধুদের খোঁজে আবার আসবেন বৃদ্ধ মজিদ

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মো. আবদুল মজিদ। দীর্ঘ বছর প্রবাস জীবন পার করছেন তিনি। প্রবাস জীবনের কিছু পুরোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে ৪৩ বছর পর এসেছিলেন বাংলাদেশে। ওই সব বন্ধুর খোঁজে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও ছাপিয়েছেন। কিন্তু কাউকেই খুঁজে পাননি। ভঙ্গহৃদয় নিয়ে শুক্রবার রাত ১২টায় অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমানে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন ৮৫ বছরের মজিদ। তবে যাওয়ার আগে জানিয়েছেন, সপ্তাহ দুয়েক পর আবার আসবেন তিনি।

দেশত্যাগের আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থানরত আবুদল মজিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ৮ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ জরুরি কাজ পড়ায় চলে যেতে হচ্ছে। শুক্রবার বিকালে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছি। এখন বিমানবন্দরে রয়েছি। রাত ১২টায় ফ্লাইট।

কারও সঙ্গে দেখা কিংবা কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আবেগাপ্লুত আবদুল মজিদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘নাহ্, কেউ ফোনও করেননি। তবে আমার বিশ্বাস কারও না কারও সঙ্গে দেখা হবেই। তাই অস্ট্রেলিয়ায় কাজ শেষে করে সপ্তাহ দুয়েক পর আবারও দেশে আসব বন্ধুদের খোঁজে।’ 

তিনি অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করলে বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরগুলো দিয়ে দেবেন। ওই নম্বরগুলো আমার ভাইয়ের ছেলের। তার সঙ্গে কথা বললে সে আমার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেবে।’  

আরও : ৪৩ বছর পর বন্ধুদের খোঁজে বাংলাদেশে

২ আগস্ট আবদুল মজিদ জানিয়েছিলেন, চাকরি জীবনের শুরুতে পিডিবিতে প্রথমে খুলনা, এরপর  বরিশাল, তারপর আবার খুলনাতে কাজ করেছেন। সেখান থেকে আশির দশকে চলে যান লিবিয়াতে। লিবিয়াতে ৯-১০ বছর কাজ করার পরে সেখান থেকে ৯০ দশকে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়াতে। লিবিয়ায় থাকাকালীন পরিচয় হয়েছিল পাবনার হান্নান, আলাউদ্দিন, টাঙ্গাইলের রেহেনা, সূচরিতা, রাজশাহীর আব্বাস, নোয়াখালীর মনির, কুমিল্লার নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়াতে চলে যাওয়ার পর থেকে সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্ত তাদের কখনও ভুলতে পারেননি।

মজিদ বলেন, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হলেও তাদের কথা সব সময়ই মনে পড়ত। তাই ওদের খোঁজে ৪৩ বছর পরে গত জুন মাসে দেশে আসি। পাবনা, টাঙ্গাইল, খুলনাতে গিয়েছি। কিন্তু কাউকে পাইনি। বিভিন্ন খবরের কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে আমি খুব সন্তুষ্টি অনুভব করতাম। জীবনটা আরও ভালো করে কাটাতে পারতাম। 

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবদুল মজিদ বরিশাল নগরের বাংলা বাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। চাকরির সুবাদে আশির দশকে লিবিয়া গিয়েছিলেন এবং সেখানে ১০ বছরের মতো কাটান। আর সেখানে কর্মরত অবস্থায় তার বেশ কয়েক বাংলাদেশি বন্ধু হয়। নব্বইয়ের দশকে মজিদ অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেই বন্ধুদের সঙ্গে। 

আবদুল মজিদের ভাইয়ের ছেলে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার চাচা ভালো মনের একজন মানুষ ও সহজ-সরল লোক। না হলে এই বয়সে শুধুমাত্র বন্ধুদের খোঁজে বিদেশ থেকে এসে বিভিন্ন জেলা-উপজেলাতে ঘুরে বেড়ান? টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। এসব করতে আমরা বারণ করেছিলাম। কিন্তু তিনি শুনেননি। তাকে সবাই আমরা সম্মান করি। চাচাকে আমরা এও বলেছি, চাচার বন্ধুদের কারও বয়স ৮৫ বছর, কারও ৮০-এর বেশি। তারা এখন বেঁচে না-ও থাকতে পারেন। এসব শুনে চাচা মন খারাপ করতেন। তিনি আমাদের পরিবারের মুরব্বি। তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলতাম না। শুক্রবার রাত ১২টার ফ্লাইটে তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন।’