টাঙ্গাইলের জোড়া খুন নিয়ে র্যাব
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২২:০৩ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২২:২০ পিএম
জোড়া খুন হত্যাকাণ্ডের গ্রেপ্তার আসামিরা। প্রবা ফটো
স্থানীয় একটি সমিতি থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের সখিপুরের মোস্তফা মিয়া। কিন্তু তিনি ওই ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। তিনি লক্ষ করেন, স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী শাহজালাল প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন। দিনশেষে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে বাসায় যান। তাই তিনি পরিকল্পনা করেন, রাতে যখন শাহজালাল বাসায় ফিরবেন, তখন তার ওপর হামলা চালিয়ে তার টাকা লুট করবেন।
ঘটনার দিন মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার পথে শাহজালালের সঙ্গে ছিলেন তার চাচা মজনু মিয়া। পথে নির্জন স্থানে মোটরসাইকেল থামিয়ে শাহজালাল ও মজনুর ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান মোস্তফা ও তার সহযোগী আলামিন। এতেই মৃত্যু হয় চাচা-ভাতিজার। পরে র্যাব মোস্তফা ও আলামিনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা র্যাবের কাছে জোড়া খুনের দায় স্বীকার করেছেন।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা শাহজালাল ও তার চাচার কাছে কাঙ্ক্ষিত টাকা পাননি। টাকা পেয়েছেন মাত্র ৬০০। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪-এর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও টাঙ্গাইলের সখিপুর অভিযান চালিয়ে জোড়া খুনের মূল পরিকল্পনাকারী মোস্তফা মিয়া ও তার সহযোগী আলামিনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নিহত শাহজালালের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন।
তিনি জানান, ১৯ জুলাই রাতে টাঙ্গাইলের সখিপুরের জামালের চালা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন শাহজালাল ও মজনু মিয়া। এ ঘটনায় শাহজালালের বাবা সখিপুর থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
র্যাব জানায়, শাহজালাল সখিপুরের হামিদপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মনিহারি ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করছিলেন। শাহজালালের চাচা মজনু মিয়া কৃষিকাজের পাশাপাশি তাকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন। ঘটনার দিন শাহজালাল রাতে বাসায় ফেরার পথে তার চাচা মজনু মিয়াকে দেখে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নেন।
আল মঈন জানান, মোস্তফার পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড হয়। মোস্তফা ও আলামিন স্থানীয় একটি সমিতির সদস্য। মোস্তফা সমিতি থেকে উচ্চ সুদে বেশ কিছু লোন নেন। এই লোনের টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক খরচ মেটাতে তার অর্থের প্রয়োজন ছিল। শাহজালাল যেদিন বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন, সেদিন ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকা বাড়িতেই রাখতেন। বিষয়টি গ্রেপ্তার মোস্তফা ও আলামিন জানতেন। মোস্তফা শাহজালালের বাড়ি ফেরার পথে আক্রমণ করে তার কাছ থেকে ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে আসছিলেন। মোস্তফা পরিকল্পনার বিষয়টি কয়েক দিন আগে আলামিনকে জানালে তিনি সম্মত হন। মোস্তফা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। আলামিন ৩ মাস আগে তার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেন।
র্যাব জানায়, ১৯ জুলাই রাত ১০টার দিকে মোস্তফা ও আলামিন বাঘের বাড়ি এলাকার জামালের চালায় নির্জন স্থানে ওৎ পেতে থাকেন। শাহজালাল মোটরসাইকেলযোগে তার চাচা মজনু মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শাহজালালের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন মোস্তফা। পরে তিনি শাহজালালের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন। শাহজালাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোস্তফা শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। এ সময় ভয়ে শাহজালালের চাচা মজনু মিয়া চিৎকার করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আলামিন লোহার রড দিয়ে মজনু মিয়ার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এরপর মোস্তফা ও মজনু মাটিতে লুটিয়ে পড়লে লোহার রড দিয়ে পুনরায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম দিকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা এলাকায় থাকলেও পরে টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকায় আত্মগোপন করেন।