লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় স্বপ্নকুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৫ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির সঙ্গে প্রকল্পের ঘরে বেড়েছে সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড় উপদ্রব।
বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়পুর উপজেলার ৮ নম্বর দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মিয়ার হাটের স্বপ্নকুটি আশ্রয়ণের ৪৫টি পরিবারের দিন কাটছে পানি সঙ্গে। জোয়ারের সময় মেঘনার পানি ঢুকছে বসতঘরে।
স্থানীয়রা জানান, ঘরগুলো নিচু জায়গায় করার কারণে জোয়ার এলে সহজেই পানি ঢোকে। মাটি ফেলে জায়গাটা উঁচু করলে এই সমস্যা হতো না। আশ্রয়ণের মানুষগুলো খুব কষ্টে আছে। দুই বছর না যেতেই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এই আশ্রয়ণ।
রেহানা বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঘর পাওয়ার পর থেকে এই আশ্রয়ণে পানি ওঠে। চেয়ারম্যান, মেম্বার একদিনও আমাদের খোঁজখবর নেন না। আমাদেরকে যেদিন ইউএনও ঘর বুঝিয়ে দিয়েছে, সেদিনেই চেয়ারম্যানকে দেখছিলাম। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত একদিনও আমাদের খোঁজখবর নেয়নি তারা। রাত হলে আমাদের ঘরের ভেতর পানি উঠে। সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড় ঘরে ঢোকে। টয়লেটের ময়লা আমাদের ঘরে ঢোকে। আমরা কয়েকবার চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’
আশ্রয়ণের ৮ নম্বর ঘরে থাকা হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। ঘরে সাপ ঢোকে। কখন আবার সাপে কামড় দেয় এই ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। গত দুই বছর এত কষ্টে আছি, একদিনও কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয় না।’
কদম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। স্কুলে যাতে পারি না। কল থেকে খাবার পানি নিতে পারি না। খাবার পানি আর টয়লেটের পানি এক হয়ে গেছে।’
স্বপ্নকুটি আশ্রয়ণের সভাপতি মো. মরণ আলী হাওলাদার বলেন, ‘এই আশ্রয়ণে ৪৫ পরিবারের ২০০ মানুষ বসবাস করে।আমরা খুব কষ্টে আছি। বলার মতো না। আমাদের সমস্যাগুলো বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে বারবার বললেও এর কোনো প্রতিকার পাই না। সবাই বলে দেখছি। গত ১ মাস আগে উপজেলায় আমাদের ট্রেনিং হয়েছিল, আমি ওখানেও আমাদের এই সমস্যার কথা বলেছি। তারপরও সমস্যার কোনো সমাধান পাইনি।‘
এ বিষয় জানতে চাইলে ৮ নম্বর দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ মিন্টু ফরাজি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এক মাস আগে গিয়েছিলাম, এখানে পানি উঠে এটা শুনেছি। এখনও এই বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলিনি। এখন বলব। আর আমি শুধু ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার সময় গিয়েছি, এই কথা সত্যি না। আমি সব সময় তাদের খোঁজখবর নেই, গত এক মাস আগেও গিয়েছিলাম।’
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্জন দাশ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই ঘরগুলো সাবেক ইউএনওর সময় করা হয়েছে। পানিসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা আমাকে আশ্রয়ণ থেকে জানিয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’