বরতল লেক
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩ ১০:১২ এএম
মৌলভীবাজারের রাজনগরে অনিন্দ্যসুন্দর বরতল লেক। প্রবা ফটো
রাজনগর। নাম শুনেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রাচীন দৃশ্যপট, কানে ভেসে আসে রাজপ্রাসাদের ঢং ঢং ঘণ্টাধ্বনি, অশ্বের খুরের আওয়াজ। মৌলভীবাজারের রাজনগর বাস্তবেও ইতিহাসসমৃদ্ধ তেমন এক প্রাচীন জনপদ। এখনও এখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় সাড়ে সাতশ বছরের প্রাচীন প্রত্নতত্ত্বের নানা নিদর্শন। একসময় এখানেই ছিল ‘ইটা রাজ্যে’র রাজধানী। আর এখনও এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক কমলা রানীর দিঘি। ১২ একর, ১২ বিঘা, ১২ পোয়া, ১২ ছটাক ভূমিজুড়ে বিস্তৃত এই দিঘি প্রকৃতির অপার এক বিস্ময়।
এই রাজনগরের সবচেয়ে মনোহর ও সুপরিচিত দর্শনীয় স্থান ‘বরতল লেক’। এর চারপাশে উঁচু-নিচু টিলা ও চা-বাগান। আর আকর্ষণীয় এ লেকের অবস্থান রাজনগরের উত্তরভাগ ইউনিয়নের উত্তরভাগ ইন্দানগর চা-বাগানের বরতল এলাকায়। এটি বন্য প্রাণী সংরক্ষিত এলাকা। বর্ষায় এ হ্রদ পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠলে প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়ে দেয়। আবার শীত মৌসুমে এটি হয়ে ওঠে হাজারো পরিযায়ী পাখির আবাস। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ এ লেকটির পাশে তৈরি করেছে সুন্দর ছাউনি। যেখানে বসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় যেকোনো সময়।
আকর্ষণীয় বরতল লেক সম্পর্কে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে মৌলভীবাজারের শমসেরনগর রোডের বাসিন্দা ফয়সল আহমেদ বলেন, ‘প্রায়ই দেশের বিভিন্ন এলাকার মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলো ঘুরে দেখি আমি। তবে বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় বরতল লেকটি দেখেছি এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ-ছয় বার। যত দেখি, ততই ভালো লাগে। বৈকালিক ভ্রমণের জন্য এর জুড়িমেলা ভার। তবে এখনও লেকটি খুব একটা প্রচার পায়নি।’
মৌলভীবাজারের গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বরতল লেকটি খুবই আকর্ষণীয়। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে আসে। লেকের একপাশে রয়েছে ঘন জঙ্গল, সেখানে বসবাস বন্য প্রাণীদের। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে লেকটির সৌন্দর্য যেন ডানা মেলে। আর শীতে পরিযায়ী পাখির পাশাপাশি লেকের স্বচ্ছ পানিতে লাল ও সাদা শাপলার উদ্ভাস এলাকার পরিবেশকে করে তোলে মোহনীয়।’
লেখক-কলামিস্ট এহসান বিন মুজাহির বলেন, ‘বরতল লেকের কথা শুনেছি অনেক আগেই। তবে দেখেছি অতি সম্প্রতি। লেকটি দেখে আমি বিস্মিত, অভিভূত। লোকমুখে যতটা সুন্দর শুনেছিলাম, বাস্তবে এটি তার চেয়ে আরও বেশি সুন্দর।’
মৌলভীবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খালেদ হোসেন বলেন, ‘বরতল লেকটি এখন মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন শিল্পের অনন্য এক স্পট। এর সৌন্দর্য অসাধারণ। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা মনোমুগ্ধকর এ লেকটি ইদানীং দর্শনার্থী ও পর্যটকদের নজরে এসেছে। এখন অনেকেই লেকটি দেখতে আসছেন। জেলার পর্যটন শিল্পে এটি নতুন সংযোজন।’
যেভাবে যাবেন বরতল লেকে
রাজনগরের বরতল লেকে যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন বা প্রাইভেট যানবাহনযোগে আসতে হবে। পর্যটন শিল্পসমৃদ্ধ জেলা ও চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার থেকে চাঁদনীঘাট হয়ে পৌঁছতে হবে রাজনগর থানার সামনে। সেখান থেকে সোজা সিলেট সড়ক ধরে যেতে হবে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মুন্সীবাজারে। সেখান থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই ডানদিকে পাওয়া যাবে উত্তরভাগ ইন্দানগর চা-বাগানের মেঠোপথ। এ পথ ধরে মুকুটপুর গ্রাম হয়ে প্রায় চার কিলোমিটার যাওয়ার পর বাগানের বরতল নামক স্থানে আকর্ষণীয় এ লেকের অবস্থান। লেকটি কিছুটা জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে অবস্থিত। তাই স্থানীয় চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে এর সঠিক অবস্থান জেনে নিতে হবে। নতুবা পথ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে লেকটিতে পৌঁছলে পথের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমেষেই।