× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মহাবিপন্ন উল্লুকের ১৮ পরিবারের গল্প দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৬ পিএম

আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৫৭ পিএম

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বাচ্চা কোলে মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি উল্লুক। প্রবা ফটো

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বাচ্চা কোলে মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি উল্লুক। প্রবা ফটো

মৌলভীবাজার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ‘মহাবিপন্ন’ উল্লুকের জন্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বনটির প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ‘মহাবিপন্ন’ উল্লুক আর অজগর সাপ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়ায় ‘মহাবিপন্ন’ উল্লুকের ১৮টি পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারে ৭০টির মতো সদস্য। এখানে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বন জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে ২৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে।

তিন বছর আগে একটি বেসরকারি গবেষণায় দেখা যায়, লাউয়াছড়ার বনে ‘মহাবিপন্ন’ উল্লুকের রয়েছে ১৮টি পরিবার। এসব পরিবারে বাস করছে ৭০টির মতো উল্লুক। এ ছাড়া লাউয়াছড়া বনের পার্শ্ববর্তী কালাছড়া ও ছাউতলি বনে রয়েছে আরও কয়েকটি উল্লুকের পরিবার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উল্লুক এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীন- এ চারটি দেশে টিকে আছে প্রাণীটি। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলার মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক, রাজকান্দি সংরক্ষিত বন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, কালাছড়া বন বিট, চাউতলী বন বিট, হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান এবং চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে রয়েছে উল্লুকের আবাস। তবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লুক (৭০টি) রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তথ্যমতে, দেশে উল্লুক এখন একটি ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী। চার দশক আগেও এদেশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে বসবাসকারী উল্লুকের সংখ্যা ছিল তিন সহস্রাধিক। কিন্তু বর্তমানে মাত্র কয়েকশ উল্লুক টিকে রয়েছে। মানুষের মতো পরিবার প্রথায় অভ্যস্ত এ প্রাণীটি বিশ্বজুড়েই রয়েছে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট এদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না নিলে কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রাণীটি চিরতরে হারিয়ে যাবে।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক, গবেষণা সহকারী ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ইকো-ট্যুর গাইড শ্যামল দেববর্মা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘উল্লুক একটি মহাবিপন্ন বন্যপ্রাণী। আমাদের দেশের পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে এরা বসবাস করছে। এ প্রাণী দেখতে অনেকটা বানরের মতো। লেজবিহীন এ প্রাণীটি পুরুষ কালো রঙের এবং নারী বাদামি রঙের হয়ে থাকে। উল্লুকের হাত ও পা অনেক লম্বা হয় এবং চোখের ওপরের ভ্রু সাদা রঙের হয়ে থাকে। লাউয়াছড়া বনে প্রথম ২০০৬ সালে উল্লুক নিয়ে গবেষণা করেন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ব্রোকস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী পেট্রা ওস্টারবার্গ। ওই গবেষণায় তিনি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে মোট ১৪টি উল্লুক পরিবারের সন্ধান পান। এ ছাড়া লাউয়াছড়া বনের পার্শ্ববর্তী কালাছড়া বন বিটে ১টি ও চাউতলী বন বিটে ১টি উল্লুক পরিবার পান তিনি। ২০০৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এলিস ও সারা লাউয়াছড়া বনে উল্লুক নিয়ে গবেষণা করেন। সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ সালে জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় লাউয়াছড়া বনে ১৮ উল্লুক পরিবারের তথ্য পাওয়া যায়। সবগুলো গবেষণা কাজে আমি অংশগ্রহণ করি এবং উল্লুকের তথ্যাবলি তাদের ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করি।’

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া বনের অসংখ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাণী হলো উল্লুক। এটি বিশ্বব্যাপী বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। আমাদের দেশে এ প্রাণীটি রয়েছে মহাবিপন্নের তালিকাভুক্ত। এরা কখনোই নিজেদের অঞ্চল ত্যাগ করে না এবং বনের ভেতরে আরেক উল্লুক পরিবারের সঙ্গে সহজে মেশে না। এ প্রাণীটি বনের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই বসবাস করে। গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় সারাদিন কাটায়। প্রাণীটির খাবারের তালিকায় রয়েছে ডুমুর ফল, চাপালিশ, কাউফল, জাম, বটফল, গাছের কচিপাতা, বাঁশের পাতা ইত্যাদি। প্রতিটি উল্লুক পরিবারে সদস্য সংখ্যা ২ থেকে ৫ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই প্রাণীটি অনেকের কাছে ‘বনমানুষ’ হিসেবেও পরিচিত। বানরগোত্রীয় প্রাণীদের মধ্যে এরা মানুষের নিকটতম। তাই এই প্রাণীটিকে ‘বনমানুষ’ বলে ডাকা হয়। লাউয়াছড়া বনে এখন উল্লুকের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়ছে। বর্তমানে লাউয়াছড়া বনে উল্লুকের পরিবার সংখ্যা ১৮টি। উল্লুককে টিকিয়ে রাখতে লাউয়াছড়ায় প্রতি বছরই উল্লুকের খাদ্যের সংস্থানে ডুমুর, চাপালিশ, কাউফল, জাম, বট ইত্যাদি ফলের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এখন আর লাউয়াছড়া বনে উল্লুকের খাদ্য সংকট নেই।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা