রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৮ পিএম
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৩ ১৯:৫৮ পিএম
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
একই মঞ্চে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক কমিটি ঘোষণা করতে গিয়ে এবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী। এ সময় তিনি মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। রবিবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের একটি স্কুল মাঠে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও কৃষক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতাকর্মীদের চেয়ার ও ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়িতে ১২ জন আহত হয়।
জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের একটি স্কুল মাঠে রবিবার বিকেলে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও কৃষক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যার দিকে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক কমিটি ঘোষণা করতে গেলে হট্টগোল শুরু। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সভাস্থলের চেয়ার ও প্যান্ডেল ভাঙচুর করে এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফারুক চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে ফারুক চৌধুরী সেখান থেকে চলে যান।
গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতে মঞ্চে একে একে বিভিন্ন কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ইসাহাক আলী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুমন আহমেদের নাম ঘোষণা করা হয়। যুব মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে সোনিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হালিমা খাতুন, কৃষক লীগের সভাপতি শামসুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেলাল উদ্দিন জুয়েলের নাম ঘোষণা করা হয়। যুবলীগের আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুলাহ আল মামুনের নাম ঘোষণার পর ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম টিপুর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সভাস্থলে উপস্থত নেতাকর্মীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন। পরে চেয়ার ও প্যান্ডেল ভাঙচুর এবং এমপি ফারুক চৌধুরীর দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে তিনি সেখান থেকে চলে যান।
তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, এমপি ওমর ফারুক দলীয় গঠনতন্ত্র ও সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজ এলাকার বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি দিয়ে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে আরও উষকে দিচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচনে নিজের বলয়কে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে একই মঞ্চে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক কমিটি দিয়ে চলেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্মেলনে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জানান, কিছুদিন ধরেই তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এমপি ফারুক চৌধুরী সম্মেলন করছেন। এসব সম্মেলনে একই মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ছয়-সাতটি করে কমিটি ঘোষণা করছেন। অথচ কমিটির গঠনের সময় সাংগঠনিক কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না তিনি। রবিবার জেলা আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনুমতি ও উপস্থিতি ছাড়াই এককভাবে তিনি সম্মেলন ডেকে কমিটি ঘোষণা করেন। এরপরই ক্ষুব্ধ হয় নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম টিপুর সমর্থকরা বলেন, টিপু এর চাইতে ভালো পদ পাওয়ার যোগ্য। অথচ ফারুক চৌধুরী কিছু অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীকে কমিটিতে জায়গা করে দিয়েছে। এই কমিটি জেলা কমিটির অনুমতি ছাড়াই দেওয়া হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘রাজশাহীতে অনেক অজনপ্রিয় মানুষকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। এই যে বিভাজনের জায়গা, সেটাকে ঐক্যের জায়গায় আনতে হবে। এখন সদস্য সংগ্রহ ছাড়া নতুন করে কোনো কমিটি হবে না; এটা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশ। তবে রাজশাহীতে এক মঞ্চে এক সঙ্গে ৪-৫টি কমিটি দেওয়া হচ্ছে। ওই সব কমিটিতে কারা আসছে। এটা দলের গঠনতন্ত্র তো গ্রহণই করে না। এর সবই হচ্ছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কমিটি নিয়ে কোনরকম সন্দেহ নেই। যে সমস্ত কথা প্রচার করা হচ্ছে তা একদম ভুয়া। আজকেও (সোমবার) স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হচ্ছে।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা আগামী ৬ আগস্টের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন সেখানে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে এমপি ফারুক চৌধুরীরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
সম্মেলনে হট্টগোল ও আহতের বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।