বান্দরবান প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৮ পিএম
বান্দরবানের থানাচি উপজেলা নকথোহাপাড়ায় ঝিরির পানিতে বিদ্রৎ উৎপাদন। প্রবা ফটো
মো. মহসিন, পেশায় মেশিনারি টেকনিশিয়ান। স্বপ্ন দেখেন দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে কম খরচে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার। সেই অনুযায়ী শুরু করেন কাজ। নিজেই বানিয়ে ফেলেন লো-আরপিএম-অলটারনেটর মেশিন। কোনো প্রকার জ্বালানি ছাড়াই চলে এ মেশিন। উৎপাদন হয় বিদ্যুৎ। মূলত পাহাড়ি ঝিরি ঝরনার পানি কাজে লাগিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন তিনি। বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরের দুর্গম নকথোহাপাড়া। এখানেই পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে বিদ্যুৎ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাহাড়ের মধ্যে প্রবহমান ঝিরিতে পানি আটকে রাখার জন্য দুই ফুট উচ্চতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি জমা হওয়ার পর তা পাইপলাইনের মাধ্যমে পড়ে ওয়াটার হুইলে। পানি পড়ে ঘুরতে থাকে ওয়াটার হুইল। প্রবহমান ঝিরির পানি থেকে উৎপাদন হয় বিদ্যুৎ। জ্বলে ওঠে আলো। তখন মহসিন ও স্থানীয়দের চোখেমুখে দেখা যায় আনন্দের ঝিলিক।
দুর্গম থানচি উপজেলার অনেকেই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। তবে এক বছর যেতে না যেতেই সোলার মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। তখন সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মহসিনের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
এ বিদ্যুতের সাহায্যে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানের পাশাপাশি কৃষিকাজে ব্যবহৃত ধান মাড়াই মেশিন চালানো যাবে বলে জানান মহসিন। তিনি জানান, এক বছর আগে ব্যক্তি উদ্যোগে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মাংসার ম্রোর পরামর্শে দুর্গম নকথোহাপাড়ার ক্যক ছুং ঝিরি এলাকার একটি ঝরনায় কাজ শুরু করেন। কষ্ট করে দুর্গম এলাকায় প্লান্ট স্থাপনের যন্ত্রপাতি ও বাঁধ নির্মাণসামগ্রী নিয়ে যান। পরে স্থানীয় ও পাড়া কারবারিরা সুফল বুঝতে পেরে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ডেভিড ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে মহসিন ভাই তার পরীক্ষামূলক কাজে সফল হয়েছেন। যদি সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা করা হয়, তাহলে দুর্গম পাহাড়ের স্থানীয় জনসাধারণ সুফল পাবেন।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অং প্রু ম্রো বলেন, ‘মহসিনের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগে সহযোগিতা করেছি। সরকারিভাবে তাকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা করা হলে দুর্গম এলাকা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।’
বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের পরীক্ষামূলক সফলতার বিষয়ে কথা হয় মো. মহসিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুতের সুফল ভোগ করুক। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যেতে মেশিন স্থাপনে ব্যয় হবে ৩০-৪০ লাখ টাকা। পরিচালনার জন্য দুয়েকজন লোকবল ছাড়া আর কোনো খরচ হবে না। অন্তত ২০ বছর অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে।’
ইউএনও মুহাম্মদ আবুল মনসুর জানান, মহসিনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছেন। তবে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ভালো বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে বান্দরবান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেন বলেন, ‘থানচি উপজেলার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছে শুনেছি। তবে এখনও পরিদর্শন করা হয়নি। পরিদর্শন শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’