মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৬:০৬ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৮:২২ পিএম
পূর্বাশা বহুমুখী সমবায় সমিতির অফিসে তালা। প্রবা ফটো
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় পূর্বাশা বহুমুখী সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই সমিতির চেয়ারম্যানসহ তিন পরিচালকের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহবুবুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, সমিতির চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী, পরিচালক মো. আলী, ওয়াজেদ আলী ও রফিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বালিজুড়ী বাজারের কাঁচা বাজারে এস এম হুমায়ুন কবির ম্যানশনে দ্বিতীয় তলায় পূর্বাশা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিডেট অফিসের দরজায় তালা ঝুলছে। স্থানীয় ও বাজারের লোকজন জানায়, প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সমিতির কার্যালয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সমিতিটি সঞ্চয় ও ঋণদান কর্মসূচি দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। তারা প্রতি মাসে অধিক লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা সঞ্চয় হিসেবে সংগ্রহ করে। সাধারণ মানুষ তাদের সবটুকু সঞ্চয় সমিতিতে জমা করেন। গ্রাহকের প্রায় ১০ কোটি টাকা সঞ্চয় রয়েছে। ৩ থেকে ৪ মাস ধরে সমিতিটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কষ্টের টাকা ফেরত পেতে বিভিন্ন জায়গায় গেলেও কাজ হয়নি।
মামলার বাদী ও সমিতির গ্রাহক আবুল মনসুর আজাদ বলেন, ‘পূর্বাশা বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রলোভনে পড়ে ২০২২ সালে জমি বিক্রির ১৭ লাখ টাকা আমানত রাখি। আমার সদস্য বই নম্বর ১৪৩। তারা কয়েক মাস লাভ দিলেও সম্প্রতি লাভ ও মূলধন কিছুই ফেরত না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে অফিসে তালা ঝুলিয়ে গা ঢাকা দেয় সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সমিতির চেয়ারম্যানসহ পরিচালকদের বাড়িতে গিয়েও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো উপায় না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’
সোলাইমান হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, মনোয়ারা বেগমসহ স্থানীয়রা জানান, মানুষ তাদের কষ্টে উপার্জিত টাকা সমিতিতে জমা রেখেছে। কেউ জমি বিক্রির টাকা, কেউ ধান-পাট-মরিচসহ বিভিন্ন ফসল বিক্রির টাকা, আবার কেউ বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা পূর্বাশা সমিতিতে জমা রেখেছে। অনেকের এ টাকাই তাদের শেষ সম্বল। এ টাকা না পেলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে।
সমবায় সমিতি আইন-২০২৩ সংশোধিত অনুযায়ী, ব্যাংকিং কার্যক্রমে জিপিএস, এফডিআর ও সঞ্চয়ী হিসেব খুলে কোনোভাবেই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা যাবে না। অথচ এখানে এসব নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ক্ষুদ্রঋণের নামে গ্রামের সহজ-সরল লোকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আমানত আদায় করা হয়েছে।
জানা গেছে, এস এম হুমায়ুন কবির ম্যানশনে দ্বিতীয় তলায় ২০২০ সালে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে পূর্বাশা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সমিতি শুরু করে। তারা মাঠকর্মীদের নিয়ে ঋণদান কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সমিতিতে পাঁচ শতাধিক গ্রাহক রয়েছে।
এ ব্যাপারে সমিতির চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘সমবায় থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবসা করা যাবে না। আমরা অনেক সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।’
ওসি মুহাম্মদ মাহবুবুল হক জানান, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিশায় রিছিল জানান, অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।