রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন
কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩ ১২:০৩ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৩ ২০:২৫ পিএম
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল। প্রবা ফটো
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের কাছেও নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকালে ইইউর মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যদের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে তাদের কাছে দেশে ফেরার আকুতি জানান রোহিঙ্গারা।
ইইউর প্রতিনিধি দলটি গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার এসে পৌঁছায়। এরপর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে তারা উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। পরিদর্শনকালে ৪ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কেন্দ্র, শিশু শিক্ষা ও খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় তাদের কাছে রোহিঙ্গারা নানা দাবি তুলে ধরেন। এরপর প্রতিনিধি দলটি ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে একদল রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপ করেন।
এরপর ১১ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘন্টাব্যাপি একান্ত বৈঠক করেন। এর আগে প্রতিনিধি দলের প্রধান ইমন গিলমোরের সঙ্গে দেখা করে চিঠি দেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের।
মোহাম্মদ জোবায়ের জানিয়েছেন, চিঠিটিতে গত ছয় বছরের শরণার্থী জীবন অত্যন্ত কষ্টকর এবং অসহনীয় উল্লেখ করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এখানে বসবাসকারি রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন অনেকটা অন্ধকার। এখনে রোহিঙ্গা শিশুরা উন্নত জীবন বা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ যা করেছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দ্রুত প্রত্যাবাসনের কথা বলা হয়েছে।
জোবায়ের জানান, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আশ্বাস দিয়েছেনÑ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছে। বিষয়টি তারা দেখবেন।
প্রতিনিধি দলের বৈঠকে অংশ নেওয়া রোকেয়া খাতুন নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, এখানে ক্যাম্প বন্ধি জীবন কষ্টকর এবং মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। প্রতিনিধিরা চেষ্টা করছেন বলে আশ্বাস্ত করেছেন। মায়মুনা নামের অপর এক রোহিঙ্গা নারীও প্রতিনিধি দলের কাছে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন।
আয়েশা নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, প্রতিনিধি দলের বৈঠকে তাদের কাছে সার্বিক বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তিনি প্রতিনিধিদের বলেছেন, আগে খাদ্য সহায়তা বাবদ ১ হাজার ২৪০ টাকা পাওয়া যেত। এখন ৮৪০ টাকা করে পাচ্ছেন। যা খাদ্য সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত না। প্রতিনিধি দলটি এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা গফুর মিয়া বলেন, খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে।
ইইউর মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলটিতে রয়েছেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় ইইউর দূত চার্লস হোয়াইটলি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন ও ইইউ বাংলাদেশের হেড আনা অরল্যান্ডিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে গতকাল বিকালে কক্সবাজার শহরে ফিরে শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের কমিশনের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউর প্রতিনিধি দল। সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের প্রধান ইমন গিলমোর।
এ সময় তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে ইইউ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, টানা ছয় বছর অবস্থান নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ, বাংলাদেশি মানুষ এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠির প্রশংসা করেন। ইমন গিলমোর বলেন, তারা গত ছয় বছর ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক উদার মনোভাব নিয়ে কাজ করেছে।
ইমন গিলমোর বলেন, এটি বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির এবং এই সময় রোহিঙ্গারা যত বড় সমর্থন পেয়েছে তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ। এই ছয় বছর রোহিঙ্গা সংকটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। এবং তা অব্যাহত থাকবে।
চার বছর ধরে বিশ্ববাসী নতুন সংকটে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চার বছরে আমরা অনেক সংকট দেখেছি। আফগানিস্তান, আফ্রিকা সংকট, ইউক্রেন পরিস্থিতি তার অন্যতম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব সংকট নিয়ে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার কাউন্সিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবু মিয়ানমারে পরিস্থিতি পরিবর্তন আনা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদে এবং মর্যাদায় প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করছেন তারা।
এর আগে গত ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দলের কাছেও প্রত্যাবাসনের জোর দাবি জানিয়েছিল রোহিঙ্গারা।