× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা

তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঘিরে আশা জেগেছে রংপুরে

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩ ১০:৫৯ এএম

আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৩ ১১:১২ এএম

গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু। প্রবা ফটো

গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু। প্রবা ফটো

উত্তরাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্ন তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন। এতে তিস্তা নদীর তীরে গড়ে উঠবে স্যাটেলাইট শহর। গড়ে ওঠা কলকারখানায় লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হবে। তিস্তা দিয়ে সারা দেশে শুরু হবে যাতায়াত। এ লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে আশা জেগেছে রংপুর বিভাগবাসীর মনে।

আগামী ২ আগস্ট রংপুরে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা চাইবেন রংপুরবাসী। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রংপুরবাসীর নানা প্রত্যাশা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শিল্পায়নেরও জোরালো দাবি উঠেছে। 

জানা যায়, প্রায় ২৩৫ বছরের পুরোনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে উত্তরের ২৫টি নদীর সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা। তবে শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিই তিস্তা নদীবেষ্টিত। নদীশাসন না হওয়ায় গত পাঁচ বছরে গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে।

২০১৭ সালে ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার এসকেএসের বাজার, পূর্ব ইচলী ও সিরাজুল মার্কেটের পাশ দিয়ে তিস্তা নদীর নতুন প্রবাহ তৈরি হয়। ওই বছর রেকর্ড পরিমাণ বন্যায় তিস্তার চর ও দ্বীপচর থেকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় স্পিডবোটে করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে কুড়িগ্রাম রংপুরসহ অন্যান্য জেলার বন্যা পর্যবেক্ষণ করেন সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। তিস্তা খনন না হওয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢলে প্রতিবছর পলি পড়ছে। এতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠছে নতুন নতুন চর। পরবর্তীতে বর্ষায় পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় নতুন নতুন দিক থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, অবকাঠামো নদীতে চলে যাচ্ছে। 

কয়েক বছর ধরে তিস্তার বামতীরে থাকা অধিবাসীরা তিস্তার কবল থেকে রক্ষা পেতে বাঁধের দাবি করে আসছে। এদিকে গত বছরের ৯ অক্টোবর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শেখ হাসিনা সেতুসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিস্তাপারের মানুষের সঙ্গে কথা বলাসহ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি এসেছেন বলে সেই সময় চীনা রাষ্ট্রদূত জানান। সেই সঙ্গে তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের ইতিবাচক সাড়ার কথা ব্যক্ত করেন। 

চীনা রাষ্ট্রদূতের তিস্তা এলাকা পরিদর্শন দেখে আশায় বুক বেঁধেছিল তিস্তাপারের মানুষ। কিন্তু ৯ মাস পার হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত ৬ মে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সর্বদলীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নাজমুল হক প্রধানসহ তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বক্তব্য দেন। এরপর গত ১ জুন রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় বেলা ১১টা থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করা হয়। গত ১৩ জুলাই ও ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে দেখা করে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক সাড়ার বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় ভারত পানি ছেড়ে দিলে আমাদের এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অথচ তিস্তা শাসন করা গেলে বর্ষা মৌসুমে চর থেকে কোটি কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হতো। এতে চর ও নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের অভাব থাকত না। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী এ সফরেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পুত্রবধূ। ২০১১ থেকে ২০১২ সালের দিকে যখন ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তি হলো না, তখন তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছিলেন। আমরা সেই সময় তিস্তাপারের লক্ষাধিক মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্যÑ সেটি এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি। রংপুর বিভাগে দরিদ্রতার হার সর্বোচ্চ আর বরাদ্দ সর্বনিম্ন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অববাহিকার এক কোটি মানুষ উপকৃত হবে। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিস্তাপারের ১৩ থেকে ১৪টি উপজেলা ও ১১টি সংসদীয় আসনের ২৫ থেকে ৩০ লাখ ভোটার প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা আনবে। 

তিনি আরও বলেন, তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও তিস্তাপারের মানুষ ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণার দাবি জানাবে। 

রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে যুগের পর যুগ তিস্তাপারের মানুষকে খরা-বন্যা ও ভাঙনের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হবে। মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে, বাড়ছে নদীশাসনের চ্যালেঞ্জ। অপরদিকে তিস্তার প্রবাহ ঠিক না থাকলে সাগরের লবণপানি লোকালয়ে উঠে আসবে। এতে ফসল আবাদ, মাছ চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই আমরা চাই উত্তরের মানুষের কথা ভেবে এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে রংপুরবাসীর স্বপ্নকে একধাপ দেখিয়ে নেবেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা