বরিশাল অফিস
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩ ২২:১১ পিএম
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩ ২২:২২ পিএম
বরিশালে শ্রমিক ইউনিয়নের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের একহাত নিলেন সাদিকপন্থিরা। ফাইল ফটো
বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে শ্রমিক ইউনিয়নের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের একহাত নিলেন সদ্যঘোষিত শ্রমিক লীগের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক রইস আহমেদ মান্না। তারা দুজন বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী। শনিবার (২২ জুলাই) রাতে তারা ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এতে তারা গণমাধ্যমকর্মীদের ‘হুমকি’ দেওয়াসহ হলুদ সাংবাদিক বলে উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরিশালের সাংবাদিক নেতারা।
গত শুক্রবার শ্রমিক ইউনিয়নের দুইপক্ষের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। এতে দুইপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকদের দুইপক্ষের সংঘর্ষ হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে সাদিক আবদুল্লাহ ও নির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারীদের টার্মিনাল দখল ও আধিপত্য বিস্তার।
গত ১৮ জুলাই বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে পরিমলকে সভাপতি ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মান্নাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ কমিটি অনুমোদনের প্রতিবাদ জানিয়ে শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন নথুল্লাবাদের শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে বরিশাল জেলা কোচ বাস, মাইক্রো বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের দাবিতে শ্রমিক নেতা ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লা ছয় দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের অয়োজন করেন। এ নিয়ে দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। আর ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়, জেলা বাস মালিক গ্রুপ ও বরিশাল জেলা কোচ বাস, মাইক্রো বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে কোন্দলের সৃষ্টি হয়। সেই কোন্দল কিছু কিছু অনলাইন পোর্টাল ও কতিপয় হলুদ সাংবাদিক জাতীয় শ্রমিক লীগ, বরিশাল মহানগরের নবগঠিত কমিটির ওপর দায় চাপাতে চায়, যা জাতীয় শ্রমিক লীগ, বরিশাল মহানগরের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শ্রমিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এ ঘটনায় শ্রমিক লীগ বরিশাল মহানগর শাখার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শ্রমিক লীগ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। ভবিষ্যতে কেউ সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি আনিচুর রহমান খান স্বপন বলেন, দুইপক্ষের সংঘর্ষ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের যে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, সেটাকে প্রতিবাদ বলা যাবে। সভাপতি ও সম্পাদক সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছেন, যা স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। যেকোনো প্রকাশিত সংবাদ যার কিংবা যাদের বিরুদ্ধে যায়, তারা প্রতিবাদ দেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিবাদকারীদের ভাষা যদি হয় হুমকি, সেটাকে কোনোভাবেই প্রতিবাদ বলা যাবে না। ওই প্রতিবাদলিপিতে শুধু হুমকিই দেওয়া হয়নি, সাংবাদিকদের নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছে শ্রমিক লীগ। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই। পাশাপাশি প্রতিবাদলিপি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পুলক চ্যাটার্জি বলেন, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা অনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করার মতো কোনো কাজ করে থাকলে তার সংবাদ অবশ্যই সাংবাদিকরা প্রকাশ করবেন। শ্রমিক লীগের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কেউ যাতে সংবাদ প্রকাশ না করেন, সেজন্য নবগঠিত শ্রমিক লীগ নেতারা পরোক্ষভাবে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছেন; যা স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। প্রতিবাদলিপি আরও মার্জিত হওয়ায় উচিত ছিল। এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুই নেতার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে শ্রমিক লীগের সভাপতি পরিমলের মোবাইলে কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাধারণ সম্পাদক মান্নার মোবাইলে কল দিলে ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে একজন ধরে বলেন, তিনি মেয়রের (সাদিক) সঙ্গে একটি প্রোগ্রামে আছেন। এ মুহূর্তে কথা বলতে পারবেন না।