মনু ব্যারাজ
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩ ০৯:৫৮ এএম
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩ ১০:০১ এএম
মৌলভীবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে মনু ব্যারেজ এলাকা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এখন আকর্ষণীয় স্থান। প্রবা ফটো
‘মনু ব্যারেজ’ স্থানীয়দের কাছে আগে স্লুইসগেট হিসেবেই পরিচিত ছিল। মনু নদের পানি শুষ্ক মৌসুমে বোরো চাষে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এ গেট। কিন্তু বর্তমানে ব্যারেজটির এ পরিচয় ছাপিয়ে তা হয়ে উঠেছে জেলার অনন্য এক পর্যটন স্পট। এমনকি, পর্যটকদের আধিক্যের কারণে মনু ব্যারেজ ঘিরে গড়ে উঠেছে হোটেল, রিসোর্ট ও পার্ক।
মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরত্বে মনু ব্যারেজ এলাকা এখন স্থানীয় ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় স্পট। প্রতিদিন বিকালে বিনোদন ও প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে ঘুরতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সময় পেলে ঘুরে যান এখানে।
মনু ব্যারেজ ঘিরে গড়ে উঠেছে উন্নতমানের একটি রিসোর্ট। রিসোর্টে রয়েছে বিশাল মনোমুগ্ধকর একটি লেক। লেকে ভাড়ায়চালিত নৌকা ভ্রমণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের তীরেই গড়ে উঠেছে একটি পার্ক। এতে ছোট-বড় সবারই চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে শিশু পার্ক ও হোটেল।
মনু ব্যারেজের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দি করতে অনেকেই ভিড় করেন। চলে ফটো শুটিং আর সেলফি তোলার ধুম। মিউজিক ভিডিও ও মডেলিংয়ের দৃশ্যও চোখে পড়ে মাঝেমধ্যেই।
বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২৬০টি আন্তঃসীমান্ত নদনদী রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৫৮টি নদনদী প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। এ ৫৮টির মধ্যে একটি হলো ‘মনু’। নদটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই জেলার সর্বদক্ষিণ পাহাড়ের উত্তরমুখী ঢাল থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তরমুখী ধারায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশে এ নদটি কুলাউড়া, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। বাংলাদেশে এ নদটির দৈর্ঘ্য ৭৪ কিলোমিটার। একসময় মৌলভীবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেকটা এ নদটির ওপর নির্ভরশীল ছিল। সে সময়ে নদটিতে বড় বড় স্টিমার ও নৌকা চলাচল করত। মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজার খেয়াঘাটের পশ্চিমে ‘জাহাজঘাটে’ নৌকা-স্টিমার নোঙর করা হতো। তবে বর্তমানে এ নদে আর বিশালাকার স্টিমার ও মালবাহী নৌকা চলাচল করে না।
মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার ১২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও এলাকা বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষায় এবং শুষ্ক মৌসুমে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার ১০ হাজার কৃষকের বোরো আবাদ করার লক্ষ্যে সদর উপজেলার মাতারকাপন এলাকায় মনু নদের ওপর ১৯৮৬ সালে তৈরি করা হয় ‘মনু ব্যারেজ’। এটি ঘিরে ধীরে ধীরে হোটেল, রিসোর্ট, পার্ক ও লেক নির্মাণ করা হয়। এ কারণে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে।
সম্প্রতি মনু ব্যারেজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশতাধিক প্রকৃতিপ্রেমী ব্যারেজটি দেখতে ভিড় করেছেন। কেউ মুঠোফোনে স্থিরচিত্র, কেউ ভিডিও ধারণ করছেন, কেউ-বা সেলফিবাজিতে ব্যস্ত।
মনু ব্যারেজ দেখতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীবগঞ্জ উপজেলার এআর রাজু বলেন, ‘প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যময় মৌলভীবাজার ঘুরতে এসেছিলাম। এখানে এসে শুনলাম মনু ব্যারেজের কথা। তাই দেখতে আসলাম। খুব ভালো লাগল ব্যারেজ এলাকাটি। বৈকালিক সময় কাটালাম আনন্দের সঙ্গে।’
শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক এহসান বিন মুজাহির বলেন, ‘মনু ব্যারেজে এসেছি অনেকবার। এলাকাটি যত দেখি যেন তৃষ্ণা মেটে না। বারবার আসি এখানে। বিশেষ করে বিকাল বেলা এর সৌন্দর্যে মন ভরে যায়।’
হবিগঞ্জ থেকে মনু ব্যারেজ ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রটি দেখতে আসা শাহ মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল বলেন, ‘মনু নদের ওপর নির্মিত মনু ব্যারেজটি খুবই সুন্দর। মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন শিল্পে এটি আকর্ষণীয় একটি স্পট। আমি দুবার এসেছি এখানে। ভালো লাগে নদের ও ব্যারেজের সৌন্দর্য।’