প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩ ১৯:২৬ পিএম
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩০ পিএম
সাগরে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা,কক্সবাজার শহরের ফিশারিঘাট। ছবি : প্রবা
ইলিশের নিরাপদ প্রজনন ও বংশবিস্তারের জন্য ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল গত ২৩ মে। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে আগামীকাল রবিবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাতে উঠে যাচ্ছে এই নিষেধাজ্ঞা। এরপর সাগরে ইলিশ শিকারে নামবেন জেলেরা। কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও শরণখোলা উপকূলের জেলেপল্লীগুলোতে এখন চলছে ইলিশ শিকারে যাওয়ার শেষ সময়ের প্রস্তুতি। এবার সমুদ্রে জেলের জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়বে এমনটা আশা ট্রলারমালিক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের।
গত শুক্রবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপকূলের জেলেপল্লী ঘুরে জানা গেছে, মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য জেলেরা প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই করেছেন। জাল, খাওয়ার পানি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে তারা ট্রলার প্রস্তুত করছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে এতদিন ঘাটে বাঁধা ছিল মাছ ধরার ট্রলারগুলো। অনেক ট্রলারে ধরেছে মরিচা। রবিবার রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে যাওয়ায় জেলেরা ফিরছেন ঘাটে। ট্রলারে জাল, রশি ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী তুলতে ব্যস্ত তারা।
কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় নিবন্ধন করা জেলের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৫। এর মধ্যে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধিত জেলে ১০ হাজার ৫৯৩ জন।
গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন জেলেপল্লী ঘুরে আলাপকালে একাধিক জেলে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি, এবার ভালো মাছ পাব। পরিবারের অভাব দূর হবে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সাগরে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে পালন করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের সরকারিভাবে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হলে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবেন। উপজেলা প্রশাসনসহ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ অবৈধভাবে মাছ শিকারের দায়ে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
আড়তে ফিরছেন জেলেরা
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে রবিবার মধ্যরাতে। এজন্য বাগেরহাটের শরণখোলাসহ উপকূলজুড়ে চলছে জেলেদের কর্মব্যস্ততা। নিষেধাজ্ঞার ফলে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় জেলেরা দীর্ঘদিন অলস সময় কাটিয়ে আবার ফিরতে শুরু করেছেন মহাজনদের আড়তে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মহাজনরা তাদের ট্রলার, জাল মেরামত সম্পন্ন করেছেন। বেশিরভাগ ট্রলার সাগরে যাওয়ার উপযোগী করা হলেও এখনও কিছু কিছু ট্রলার বিভিন্ন ডকে মেরামত চলছে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে জেলেরা নিজ নিজ এলাকা থেকে এসে মৎস্য আড়তগুলোতে জড়ো হচ্ছেন। তারা কেউ কেউ ট্রলারে জাল তুলছেন। কেউ রসদ কেনাকাটা ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ছাড়া উপজেলার চারটি ডকে এখনও অর্ধশতাধিক ট্রলার মেরামত করতে দেখা গেছে। এসব ট্রলার সপ্তাহখানেকের মধ্যে মেরামত সম্পন্ন হবে।
জেলেরা বলেন, ‘৬৫ দিনের অবরোধে আমাগো খুবই কষ্টে দিন কাটছে। একদিন সাগরে না গেলে আমাগো সংসার চলে না। মহাজনের কাছ দিয়া হাজার হাজার টাকা ধার নিছি। সুদেও টাকা নিয়া সংসার চালাইতে হইছে। এহন সাগরে যাইয়া মাছ ধইর্যা সেই দেনা ও সুদের টাকা শোধ করতে হইবে।’
শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। নিষেধাজ্ঞার এই সময় বেকার জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। শরণখোলা উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ৩ হাজার ৭৬। প্রত্যেককে দুই কিস্তিতে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
উপকূলের হাজার হাজার জেলে
প্রস্তুতি শেষে সাগরে মাছ শিকারে যেতে ট্রলারে অবস্থান করছেন কক্সবাজার উপকূলের হাজার হাজার জেলে। সবার মাঝে বিরাজ করছে সাগরে যাওয়ার আনন্দ। আশা করছেন, সাগরে ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কক্সবাজার বাঁকখালী নদীর উপকূলে নোঙর করা ট্রলার এফবি মায়ের দোয়া। সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য ট্রলারে মজুদ করা হয়েছে খাদ্য, জাল, ড্রামসহ নানা সামগ্রী। রবিবার মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যাবে ট্রলারটি। তাই মনের আনন্দে গান করছেন ট্রলারে থাকা জেলেরা। বলছেন, ৬৫ দিন পর সাগরে যাওয়ার আনন্দে মেতেছেন তারা।
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি মোহাম্মদ মাকছুম বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষ হচ্ছে রবিবার মধ্যরাতে। তাই মনে খুব আনন্দ। কারণ ৬৫ দিন বন্ধের কারণে সংসার নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে ছিলাম। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার সকালে সাগরে মাছ শিকারে যাব।
শুধু এফবি মায়ের দোয়া ট্রলার নয়, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাগরে যাওয়ার জন্য কক্সবাজার উপকূলে অপেক্ষা করছে অসংখ্য ট্রলার। জেলে ছুরুত আলম বলেন, ‘ট্রলারে তেল, জাল, ড্রাম, রশি ও খাদ্যসহ সবধরনের সামগ্রী মজুদ করা হয়েছে। আমরা ২২ জেলে ট্রলারে অবস্থান করছি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১০ দিনের জন্য সাগরে মাছ শিকারে যাব।’