পটুয়াখালী এলজিইডির দুর্নীতি
আঞ্চলিক প্রতিবেদক, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ২৩:০৫ পিএম
পটুয়াখালী এলজিইডির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ঘুষ, পারসেন্টেজ বাণিজ্যের দরকষাকষি ও গাফিলতিতে ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া দুর্নীতি করে অধিকাংশ কাজের সিংহভাগ অর্থ স্পেশাল ডিপোজিট মানি (এসডি মানি) করেছে এলজিইডি। ফলে কাজগুলো আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় ঠিকাদার। তাদের অভিযোগ, কাজ না করেও অনেক প্রতিষ্ঠান বিল পেয়েছে; আবার কাজ করে অনেকে বিল পায়নি।
অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পটুয়াখালী-বরগুনা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীতে ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণকাজ শুরু করে এলজিইডি। কয়েক দফা সময়ও বাড়ানো হয়। কিন্তু এলজিইডির স্নেহধন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রিম বিল দেওয়ায় কাজ বাস্তবায়নে ধীরগতি শুরু হয়। পরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। এ কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এলজিইডি ও কতিপয় ঠিকাদারের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দরকষাকষি চলে। এলজিইডি ও ঠিকাদারের আধা-আধা ভাগাভাগির চুক্তিতে প্রকল্প সম্পাদন দেখানো হয়। ভাগাভাগি নিয়ে দরকষাকষির একপর্যায়ে চূড়ান্ত বিল প্রস্তুত ও দাখিলে গাফিলতি ঘটে। এ কারণে ২৮টি প্রকল্পের প্রায় ৩০ কোটি টাকা ফেরত যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সিকদার বাড়ির সামনে সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হলেও এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অথচ কাগজে-কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়েছে এলজিইডি। ২০১৮ সালে বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া এলাকার বৌলতলী বাজার সেতু থেকে তিন কিলোমিটার সড়ক-কালভার্ট নির্মাণ শুরু হলেও ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে। এ কাজ কাগজে-কলমে সম্পন্ন করেছে এলজিইডি। কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর থেকে চাপলিবাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ চলতি মাসে শেষ হয়েছে। অথচ আগেই ঠিকাদারকে বিল দিয়েছে এলজিইডি। একইভাবে একাধিক কাজকে কাগজে-কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে চূড়ান্ত বিল প্রস্তুত করে হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে পাঠায় এলজিইডি। তবে অর্থ ছাড় হয়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, জুনের প্রথম দিকে কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে বিল ছাড়াতে টেবিলে টেবিলে অগ্রিম পারসেন্টেজের টাকা দিতে হয়। এরপর জেলা কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে টেবিলে টেবিলে অগ্রিম পারসেন্টেজ নিয়ে চলে দরকষাকষি। এ কারণে বিল প্রস্তুতের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এ ছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় কাজ ওঠাতে হিমশিম খেতে হয়। এরপর কাজের মান নির্ণয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ানের প্রত্যয়ন নিতে টাকা দিতে হয়। না দিলে ভুলভাল রিপোর্ট দিয়ে বিপদে ফেলেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফ হোসেন বলেন, ‘অভিযোগকারীকে আমার সামনে আনেন; সত্য-মিথ্যা পরে দেখব; কে অভিযোগ করেছে তার নাম-ঠিকানা আগে দেন।’ বাস্তবে নয়, কাগজে-কলমে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগে অভিযোগকারী লাগবে, পরে প্রশ্নের উত্তর দেব।’
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহির উদ্দিন শেখ বলেন, ‘নানা কারণে কাজগুলো দেরিতে হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশিত হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহাসিন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২৫ জুন রাত ১২টার পর সার্ভার বন্ধ হয়েছে। এর আগে অনেকে বিল নিয়েছেন। এখানে আমাদের গাফিলতি ছিল না। এসডি মানি সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি এই কর্মকর্তা।