সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে জান্নাত বললেন
শেরপুর ও জামালপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ২২:৫৩ পিএম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩ ২৩:০১ পিএম
বকশীগঞ্জ শহরের পাটহাটি মোড় এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে সাংবাদিক কন্যা জান্নাত। ছবি : প্রবা
জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার প্রতিবাদে জেলার বকশীগঞ্জে আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম। তিনি মঞ্চে ওঠামাত্র শুরু হয় কানাঘুষা ও সমালোচনা। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে দ্রুত সমাবেশ মঞ্চ ত্যাগ করেন তিনি।
এই শাহিনা বেগম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদারকে নাদিম হত্যার মাস্টারমাইন্ড বলে অভিযোগ করে আসছেন নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে বকশীগঞ্জ শহরের পাটহাটি মোড় এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে সাংবাদিক কন্যা জান্নাত বলেন, ‘সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে এ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মাহমুদুল আলম বাবুর বাহিনী। আর এতে সরাসরি মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন, জামালপুর সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা ও বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবের যৌথ আয়োজনে এ সাংবাদিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাব্বিলাতুল জান্নাত আরও বলেন, ‘শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার রাজাকারের সন্তান। এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বরাতে আমার বাবা প্রতিবেদন করেছিলেন। সে সময় থেকেই বাবাকে তারা হুমকি-ধমকি ও মামলা দিয়ে আসছে। যার কারণে আমার বাবা থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছিলেন। সবশেষে তারা বাবাকে মেরেই ফেলল।’
মঞ্চেই হুমকি উপজেলা চেয়ারম্যানের
বাবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, আগের ঘটনা ও তার পরিবারের ওপর বিভিন্ন চাপের ব্যাপারে কথা বলেন জান্নাত। এর প্রতিবাদে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার মঞ্চে উঠেই হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘১৪ তারিখের যে ঘটনা (নাদিম হত্যা) সেটা সিসি ক্যামেরাতেই আছে এবং পুলিশ সে অনুযায়ী আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। গ্রেপ্তাররা অনেকেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। কিন্তু এখানে তো আর মাস্টারমাইন্ড খোঁজার দরকার পড়ে না। এখানে রাজনৈতিক খেলা, নাদিমের মেয়েকে মগজধোলাই দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।’
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা বকশীগঞ্জ, এটা আমারি জায়গা। চিল্লাইয়া লাভ নাই। এখানে কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না।’
সাংবাদিক নেতাদের প্রতিবাদের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার আসার কথা ছিল না। আমাকে কেউ দাওয়াত দেয়নি। আমি টেলিফোনে নাদিমের মেয়ের বক্তব্য শুনেই এখানে এসেছি। বকশীগঞ্জ আমাদের শান্তিপ্রিয় জায়গা। এখানে অশান্তি করে কোনো লাভ নাই।’ একপর্যায়ে তিনিও মঞ্চ ছেড়ে চলে যান।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন হুমকিমূলক বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন সাংবাদিক নেতারা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান যে ধরনের বক্তব্য দিলেন, তা সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের জন্যও হুমকিস্বরূপ। স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের ওপর যদি কোনো ধরনের ক্ষতি বা অন্যায় কিছু হয়, তাহলে এর দায় উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘নাদিমকে যারা মেরেছে এবং ঘটনার মাস্টারমাইন্ড যারা, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘হুমকি-ধমকি দিয়ে লাভ নেই। বাংলার মাটিতে নাদিম হত্যার বিচার হবেই।’
শেরপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করার দাবি জানাই।’
গত ১৪ জুন রাতে হামলার শিকার হন নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তাফার সঞ্চালনায় এই সাংবাদিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।