প্রাথমিক অনুসন্ধানের তথ্য
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫৮ পিএম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৯:১৩ পিএম
পুলিশ-বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের সময় হত্যা করা হয় সজিব হোসেনকে। প্রবা ফটো
আর্থিক লেনদেন ও বিয়েসংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের যুবক সজিব হোসেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বিএনপি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর আগেও কর্মী মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল বিএনপি।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৯ জুলাই) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।
তিনি জানান, জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে সজিবের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ। ওই ফুটেজে দেখা গেছে, সজিব আহত অবস্থায় ফিরোজা ভবন নামে একটি বাসায় ঢুকে পড়ছেন। মৃত্যুর আগে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া নোমানের সঙ্গে তার কথা হয়। সজিব ওই ব্যক্তিকে বলেছেন, সে বিএনপির প্রোগ্রামে আসেনি কিংবা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না। চার থেকে পাঁচজন লোক তাকে কুপিয়েছে। তার কাছে তারা টাকা পায়। এরপর সজিব আর কোনো কথা বলতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। সজিবের শরীরে চারটি কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে সজিবের রক্তাক্ত দেহ।
আহত সজিবের সঙ্গে সেদিন কথা হয়েছে দাবি করা এক ব্যক্তির ভিডিও সাক্ষাৎকার এসেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে। প্রায় তিন মিনিটের ভিডিওর শুরুতে ওই ব্যক্তি নিজেকে নোমান হোসেন (এসপি সংবাদ সম্মেলনে যার কথা বলেছেন) নামে পরিচয় দেন। জানান, তার বাড়ি কমলনগরে। ভাড়া থাকেন ফিরোজা টাওয়ারে। পেশায় ব্যবসায়ী নোমান ঘটনার বর্ণনায় বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে একটি ছেলেকে বাসার পকেট গেট দিয়ে ঢুকতে দেখেন তিনি। বাড়িতে ঢোকার পর গেট লক করে সে দোতলার দিকে দৌড় দেয়। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে দৌড়ে এসে সে লিফটের গোড়ায় পড়ে যায়। মানবিক কারণে আমি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসি। নাম-পরিচয় জানতে চাইলে ছেলেটি জানায়, তার নাম সজিব, বাড়ি চন্দ্রগঞ্জ। মিছিল-মিটিংয়ে আসেনি জানিয়ে সজিব আরও বলে, চার-পাঁচজন লোক তাকে এমন (জখম) করেছে। কেন করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সজিব বলে, আমাদের টাকা-পয়সার লেনদেন ও বিয়েসংক্রান্ত একটা ব্যাপার আছে। যেটাকে কেন্দ্র করে হয়তো হতে পারে। নোমান বলেন, এরপর তিনি সজিবকে আরও কিছু প্রশ্ন করেন। তবে ততক্ষণে সজিব জ্ঞান হারান। এরপর তিনি জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন সহায়তার জন্য। তবে মিছিল মিটিংয়ের জন্য রাস্তায় যানজট থাকায় তাৎক্ষণিক কেউ সেখানে পৌঁছতে পারেনি।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত জেলা শহরের কলেজ রোড ও মজুপুর এলাকায় পুলিশ-বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় সজিব হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। তাকে কৃষক দলের কর্মী বলে দাবি করছে বিএনপি।
লক্ষ্মীপুরের বিশিষ্ট কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক গাজী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সেদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি ছিল। তখন কলেজ রোড এলাকায় সজিব হোসেন নামে একজন খুন হন। বহু বছর পর জেলা শহরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর রহস্য উদঘাটন না হলে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠবে। রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা হবে।’