সুনীল দাস চৌধুরী, খুলনা
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ১১:১৩ এএম
হ্যানে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রবা ফটো
খুলনায় হ্যানে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে পাকাবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা ও তার স্ত্রী তাহমিনা আহম্মেদ।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার মৌখিকভাবে জায়গা ছেড়ে দেওয়া ও রেলওয়ের নিয়ম না মেনে নির্মাণ করা ভবন অপসারণের নোটিস দিলেও তিনি দখল বহাল রেখেছেন।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে অহরহ চলাচল করে থাকেন। মিছিল-মিটিং ও সমাবেশের লোকজন নিয়েও একত্র হন। এতে বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিষয়টি নিয়ে মৌখিকভাবে বলা হলেও তিনি কর্ণপাত না করে বিদ্যালয়ের জমি দখলে রেখে বসবাস করছেন।
অভিযুক্ত ফরিদ আহমেদ মোল্লা খুলনা সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব। তিনি দীর্ঘদিন ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, তাদের পরিবার বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের পূর্ব পাশের প্রায় ২ শতক জমি দখল করে পাকা বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তারা বিদ্যালয়ের জায়গায় বসবাস করছেন। ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর দখল স্থায়ী রূপ নেয়। ওই সময়ে বিদ্যালয়ের পুরাতন একটি ভবন নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবেও ব্যবহার করতেন তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দখলে থাকা জায়গাটি রেলওয়ের কাছ থেকে বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের নিয়মনীতি না মেনে তারা অবৈধভাবে ছাদসহ বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন, যা রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। বরাদ্দ নেওয়া জমি ছাড়াও তারা বিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার জায়গা ছেড়ে দেওয়া ও রেলওয়ের নিয়ম না মেনে নির্মাণ করা ভবন অপসারণের নোটিস দিলেও তিনি দখল বহাল রেখেছেন।
হ্যানে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বেগম জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেকেন্দার আলী রেলের জায়গা লিজ নিয়ে বসবাস করতেন। এর পাশেই বিদ্যালয়ের কিছু জমি দখল করেও বসতঘর নির্মাণ করা হয়। তিনি অবসরে যাওয়ার পরও বিষয়টি কারও নজরে আসেনি। গত এপ্রিল মাসে সদর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা জানান, তার শ্বশুর সেকেন্দার আলী হ্যানে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন পাশের রেলওয়ের জমি বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করতেন। শ্বশুর মারা যাওয়ার পরেও দীর্ঘদিন ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছে তার পরিবার। নিরাপত্তার জন্য ওই জায়গায় বাউন্ডারি ওয়ালসহ বসতবাড়ি নির্মাণ, গেট স্থাপন করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রয়োজন হলে তিনি জায়গা ছেড়ে দেবেন বলেও জানান।
রেলওয়ের খুলনার ১৮ নং কাচারীর কানুনগো মো. মনোয়ার হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ফরিদ আহম্মেদ মোল্লাকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম জানান, তিনি এতদিন জায়গা দখলের বিষয়ে অবহিত ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, সরকারি বিদ্যালয়ের জায়গায় কেউ ব্যক্তিগত বসতবাড়ি নির্মাণ করে থাকলে সেটা অবশ্যই আইনবহির্ভূত। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি এতদিন অবহিত করেননি। অভিযোগ যাচাই করে জেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা সাপেক্ষে দখল উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।