ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪২ এএম
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩ ১২:৫০ পিএম
আবু তালেবের তৈরি বাঁশের কারুপণ্য। প্রবা ফটো
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার পশ্চিম শ্রীমঙ্গল (লালবাগ) গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু তালেব। দরিদ্র পরিবারের সন্তান তালেবের লেখাপড়া এগোয়নি বেশি দূর। খুব কষ্টে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর লেখাপড়ার ইতি টেনে পরিবারের অন্নের সংস্থানে নেমে পড়েন তিনি। শুরু করেন নষ্ট হওয়া এলইডি বৈদ্যুতিক বাতি মেরামতের কাজ।
দিনে দুই-চারটি বাতি মেরামত করে যা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচই চলত না। ফলে দিন দিন বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। অবশেষে নিজের পরিশ্রম ও প্রতিবেশী এক গণমাধ্যমকর্মীর সহযোগিতায় শুরু করেন বাঁশ ও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলের শো-পিস বা কারুপণ্য তৈরির কাজ। এখন তিনি পুরো উপজেলার এক পরিচিত নাম। পরিত্যক্ত বোতল, বাঁশ ও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা তার কারুপণ্য বিক্রি হয় মেলা, পূজাসহ বিভিন্ন স্কুল ও গ্রামের হাটবাজারে।
আবু তালেব মো. রূপা মিয়ার চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি বলেন, তার বয়স ৩৫ বছর পেরিয়েছে। লেখাপড়ায় ছিলেন খুবই মেধাবী। ২০০৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরিবারের দরিদ্রতার কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। সে সময় থেকেই পরিবারকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন।
২০১৩ সালে নষ্ট এলইডি বৈদ্যুতিক বাতি মেরামতের কাজ শিখে সবুজবাগ এলাকায় স্থানীয় বাজারে একটি ছোট্ট দোকান খুলে বসেন। কিন্তু সে দোকানের আয় দিয়ে নিজের দৈনন্দিন খরচ নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সংসারের বোঝা টানতে গিয়ে সব ভাই-বোনের বিয়ে হলেও তার বসা হয়নি বিয়ের পিঁড়িতে। ২০১৬ সালে তাকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী গণমাধ্যমকর্মী শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য সুলতান মাহমুদ। তিনি তালেবকে বাঁশ, বেত ও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলের কারুপণ্য তৈরির পরামর্শ ও কিছুটা প্রশিক্ষণ দেন। সুলতান মাহমুদের পরামর্শে আবু তালেব এ কাজ শুরু করেন। গত সাত বছরে এ কাজ করে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে আবু তালেব বলেন, ‘২০১৩ সালে সংসারে অন্নের সংস্থানে নষ্ট বাল্ব, চার্জার লাইট মেরামতের কাজ শুরু করি। স্থানীয় গ্রাম্য বাজারে তালেব সার্ভিসিং সেন্টার নামে একটি দোকান ভাড়া নিই। কিন্তু সে ব্যবসায় খুব একটা সফল হতে পারিনি। পরে আমার প্রতিবেশী সাংবাদিক সুলতান মাহমুদের সহযোগিতা ও পরামর্শে বাতিল প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ফুল, ফুলগাছ ও ফুলদানি তৈরির কাজ হাতে নিই। প্রথম দিকে বেশ সাড়া পাই। বিক্রিও হয় প্রচুর। এতে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। ইন্টারনেট ও ইউটিউব দেখে অন্যান্য পণ্য তৈরির চেষ্টা চালাই। এখন আমার তৈরি কারুপণ্যের বেশ কদর। প্রতিটি কারুপণ্য সৌন্দর্য ও সাইজভেদে ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আমার সংসারে এখন আর অভাব নেই।’
গণমাধ্যমকর্মী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের সন্তান আবু তালেবের জীবনযুদ্ধ দেখে খুব খারাপ লাগত। তাই তাকে প্লাস্টিকের বোতল ও বাঁশের শো-পিস তৈরির পরামর্শ দিই। এখন সে সফল। তার পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে দেখে ভালো লাগছে। এখন তালেব তার দোকানে বসে মোবাইল মেরামত, নষ্ট এলইডি বাল্ব, চার্জার লাইটের কাজের পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতল ও বাঁশের তৈরি শো-পিস তৈরি করে তা বিক্রি করেন। তার তৈরি আকর্ষণীয় শো-পিস উপজেলাবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি এখন গ্রামের আরও কিছু ছেলেকে বিনামূল্যে এ শো-পিস তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তারাও স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।’