চাঁদপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩ ১১:২৩ এএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩ ১১:৩৮ এএম
শতবর্ষী আবুল বাশার মুন্সী। প্রবা ফটো
শতবর্ষী আবুল বাশার মুন্সী। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৭ নম্বর বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামে জাকনী মিজি বাড়ির বাসিন্দা তিনি। ১১২ বছর বয়সি আবুল বাশার তার জীবনের যত সম্পদ সবই দিয়েছেন দুই ছেলেকে। কিন্তু সেই ছেলেদের কাছেই শেষ পর্যন্ত ঠাঁই মেলেনি তার।
দুই ছেলে ও চার মেয়ের বাবা আবুল বাশার। ইমামতি আর মক্তবে পড়িয়ে সারা জীবনের আয় দিয়ে দুই ছেলেকে কর্মজীবনের হাল ধরিয়েছেন। সন্তানদের স্বপ্ন পূরণে নিজের দুই একর জমিও বিক্রি করে দিয়েছেন। শেষ আশ্রয়ের ঘরটাও বিক্রি করে ছোট ছেলেকে দালান করতে অর্থ দিয়েছেন। দুই বছর আগে স্ত্রী মারা গেলে আরও একা হয়ে পড়েন তিনি। এখন নিজের বলতে কিছুই নেই এই বৃদ্ধ বাবার।
বৃদ্ধ বাবা আবুল বাশার মুন্সী বলেন, 'বড় ছেলের পেছনে বেশিরভাগ সম্পত্তি খরচ হয়েছে। তাকে একাধিকবার বিদেশ পাঠানোর জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। ছোট ছেলেকে শেষে আমার ঘর বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আর আমি ছাড়া আমার কেউ নেই।'
আবুল বাশার মুন্সীর মেয়ে নুরজাহান বেগম বলেন, 'প্রায় আট-নয় বছর ধরে স্বামীর সংসারে থেকে বৃদ্ধ মা-বাবার সেবা করছি। মা মারা যাওয়ার পরও বাবার দায়িত্ব নেয়নি দুই ভাই। মাত্র দেড় মাস বাবাকে রাখলেও গেল সপ্তাহে বড় ভাই শাহাদাত ডেকে নিয়ে বাবাকে পুনরায় আমার কাছে তুলে দেয়।'
তিনি আরও বলেন, 'ভাইয়েরা বছরে দুয়েকবার খবর নেয়। তখন ৫০০ বা ১০০০ টাকা দেয় বাবার খরচের জন্য। আমরা বোনেরা নিয়মিত খবর নেই।'
আবুল বাশার মুন্সীর ছোট ছেলে আনোয়ারের স্ত্রী বলেন, ‘আমি অসুস্থ। সন্তানদের নিয়ে সংসারের কাজ করাই কষ্টকর। তাই শ্বশুরকে রাখতে পারছি না।’
বড় ছেলের কাছে বাবাকে আশ্রয় না দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, এটি ঘৃণিত কাজ। পিতা-মাতার জন্য ২০১৩ সালের ভরণ-পোষণ আইনে সন্তানদের জন্য জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম তানজীর বলেন, এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। প্রথমত সামাজিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আবুল বাশার মুন্সীর সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।