সাভার (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩ ১৯:৪৫ পিএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩ ২৩:০৪ পিএম
সাভারের বংশী নদীর তীর। প্রবা ফটো
সাভারের বংশী নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠেছিল বহু অবৈধ স্থাপনা। তীর দখলের ফলে নদীটি হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক গতিপথ, দূষিত হয়ে পড়ে নদীর পানি ও এর আশপাশের পরিবেশ। স্বাধীনতার পর থেকে দখলমুক্ত করতে তেমন কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও সম্প্রতি সাভার উপজেলা প্রশাসন বংশী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে নদীপাড়ে বসবাসরত মানুষ।
বর্তমানে বংশী নদী অবৈধ দখলমুক্ত। তবে এই দখলমুক্ত অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে ও টেকসই করতে নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল দপ্তরকে কাজ করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১৩৩৪০/২০১৯ নং রিট মামলার আলোকে বংশী নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত রাখার জন্য ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বংশী নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়। পরে ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর দুদিন নদীর তীরবর্তী প্রায় ২ একর জায়গা ও ১ একর খাস জায়গা উদ্ধার করা হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর এ উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। পরে ৩০ ও ৩১ সেপ্টেম্বর প্রায় ২ একর নদীর জায়গা এবং ৩ একর খাস জায়গা উদ্ধার করা হয়। মোট চার দিন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বংশী নদীর তীরবর্তী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ২৮৬ জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৪ একর নদীর জায়গা এবং প্রায় ৪ একর খাসজমি উদ্ধার করা হয়।
আরও জানা যায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাভার উপজেলা প্রশাসন, সাভার পৌরসভা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পল্লী বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বংশী নদীর তীরবর্তী অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান হয়। এ উচ্ছেদ অভিযানে সাভার উপজেলার নাগরিক কমিটি, পরিবেশবাদী কমিটি, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সকল স্তরের জনগণ সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। উচ্ছেদপরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসন, ঢাকা, বিআইডব্লিউটিএ ও উপজেলা প্রশাসন, সাভারের যৌথ উদ্যোগে বংশী নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয় এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নদীর সীমানা সম্পূর্ণভাবে আলাদা করা হয়।
এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নদী উদ্ধারে সাভার উপজেলা প্রশাসনের এমন আন্তরিকতা আমাদের কাছে এখন দৃষ্টান্ত। নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েও অতীতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। দেখা গেছে, উচ্ছেদের কিছুদিনের ব্যবধানেই নদীর জায়গা ভরাট বা দখল করে পুনরায় দখল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে দখলকারদের। তা হলো, যত ক্ষমতাধরই হোন না কেন, নদীর জায়গা দখল করা যাবে না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান নিজের সংসদীয় আসনে নদী উদ্ধারে প্রশাসনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা দিনের পর দিন নদী দখল করে গেছেন। অতীতে লোক দেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও এবার সাভারবাসী দেখেছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এভাবে প্রভাবশালীদের উচ্ছেদ করা যাবে- এটা তারাও ভাবেননি। এর মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বংশী নদীপাড়ের বাসিন্দা রহমান ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার কারণে দাঁড়িয়ে থাকা যেত না। এখন অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়ায় নদীটি দেখতেও ভালো লাগছে।’
সোহরাব মিয়া বলেন, ’বংশী নদী অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে, তবে পানি দূষণমুক্ত করাটা জরুরি। নদীর যে অংশটুকু উদ্ধার করা হয়েছে, তা দ্রুত খনন করা প্রয়োজন। নদী পুনরায় দখল হবে না, এমন প্রত্যাশা আমাদের সবার।’
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করেছি। ভূমি জরিপের মাধ্যমে সেখানে হাটবাজার ও নদীর জমি যা ছিল, তা পৃথক করা হয়েছে। সেখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাঁটাতারের মাধ্যমে সীমানা করে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘নদী একটি চলমান সড়ক। নদী একটি প্রবাহমান পানির ধারা। নদী যদি আমরা ভরাট করি বা দখল করি, তাহলে নদী সংকুচিত হয়ে যায়। এতে পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয় এবং পরিবেশর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।’
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ’বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন এই নদী দখলমুক্ত করতে অনেক কাজ করেছে। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি বিগত দেড় বছর ধরে দেখছি। কিন্তু আবারও অবৈধ দখলদাররা আসছে দখল করতে। এসব বন্ধ করতে আমাদের সবার একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।’