আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫০ পিএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩ ১৯:১৭ পিএম
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার জন্য রাখা মোরগ। প্রবা ফটো
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) গবেষণার জন্য বিদেশ থেকে আনা উন্নতজাতের ৩৮টি মোরগ চুরি হয় ঈদুল আজহার আগের রাতে। চুরির ঘটনায় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে।
তবে চুরির বিষয়ে বিএলআরআই মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। তথ্য দিতে লুকোচুরি করছেন তার অধীনস্থরাও। কেন, কী কারণে তারা কোনো তথ্য দিচ্ছেন না, সেটিও জানা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মোরগ চুরির বিষয়ে কথা বলতে বিএলআরআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কেউই এ ব্যাপারে কথা বলেননি। পরে সংস্থাটির কার্যালয়ে গবেষণাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কক্ষে গিয়ে আলাপের চেষ্টা করে এই প্রতিবেদক, কিন্তু তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। কয়েকজনকে ফোন করা হয়, তবে তারা রিসিভ করেননি।
বিদেশ থেকে আনা উন্নতজাতের মোরগগুলোর গবেষণার দায়িত্বে ছিলেন পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুন নাহার মনিরা। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনি কিছু বলতে পারবেন না, সে কথাও জানান।
বিএলআরআই মহাপরিচালকের লিখিত নিয়ে এলে সবাই কথা বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পোল্ট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শাকিলা ফারুক।
বিএলআরআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কার্যালয়ের পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতাভুক্ত। সরেজমিনে নিরাপত্তাপ্রধানের কক্ষে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। যে মনিটরগুলো আছে তাতে দেখা যায় বহু ক্যামেরা অচল হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ৩২ জন আনসার সদস্য কাজ করেন বলে জানা গেছে। তারপরও গবেষণার কাজে রাখা মোরগ চুরি হলো কেন, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কিছুই বলছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএলআরআই নিরাপত্তাপ্রধান আহসান হাবিব প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান, কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্তের পর জানানো হবে।’
কমিটিতে কে কে আছেন, জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না বলে জানান তিনি।
বিএলআরআই তথ্য কর্মকর্তা দেবজ্যোতি ঘোষ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি নন। পাওয়া যায়নি বিএলআরআই মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে। তার মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
২৮ জুন রাতে গবেষণা শেডের ৫ নং পিওরলাইন মেল শেড থেকে বিদেশি মোরগগুলো চুরি হয়। ৫ জুলাই এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু পুরো বিষয়টি চেপে যেতে চায় বিএলআরআই। এ অবস্থায় সোমবার (১০ জুলাই) দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মোরগগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মনিরুল ইসলাম জানান, ঈদের আগের রাতে কোনো একসময় শেড থেকে ৩৮টি মোরগ চুরি হয়। তাদের এই শেডে ৩০০ মোরগ ছিল। চুরি হওয়া মোরগগুলো আরআইআর ও হোয়াইট লেঘুন জাতের। তারা দায়িত্ব পালন করেন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। এরপর নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন।
বিএলআরআই পোল্ট্রি ও উৎপাদন গবেষণা বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে এই মোরগগুলো নিয়ে গবেষণা করে আসছিল। ১৯৯৯ সালের দিকে চারটি মোরগের জাত উপহার পেয়েছিল সংস্থাটি। এসব জাত গবেষণা করেই বিভিন্ন সময় স্বর্ণা, সুবর্ণ, শুভ্রার মতো বিভিন্ন উন্নতজাত উদ্ভাবন করে বিএলআরআই। তার মধ্যে দুটি জাত ছিল চুরি যাওয়াগুলো।