বান্দরবান প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩ ১৮:২০ পিএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩ ১৮:৪৭ পিএম
কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মুহাম্মদ কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি উপজেলায় ইউএনডিপি পরিচালিত জাতীয়করণকৃত ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
১৬টি স্কুলে কর্মরত ৫৫ শিক্ষককে ২০১৭ সালে জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়। এই ৫৫ জনের মধ্যে ৪৩ জনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা করে বিভিন্ন সময়ে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ওই টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা এবং সংশ্লিষ্ট কমকর্তার অপসারণের দাবিতে বুধবার (৫ জুলাই) বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বরাবর আবেদন করেছেন তারা।
আবেদনে বলা হয়েছে, ওই কর্মকর্তা ও তার অফিসের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে রোয়াংছড়ি উপজেলার সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। সদ্য জাতীয়করণকৃত ইউএনডিপির ৫৫ জন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্য বকেয়া বেতন-ভাতার বিলের বিপরীতে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা দাবি করেছেন তিনি। ওই টাকা না দিলে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করাসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এসবের মাধ্যমে ৪৩ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ইতোমধ্যেই তিনি তিন লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ছাড়াও শিক্ষকদের বিভিন্ন অনলাইন তথ্য আপডেটের জন্য সহকারী শিক্ষকদের হয়রানি করে সামান্য কাজেও জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে নেন। শিক্ষকদের নিজের প্রোফাইলের পাসওয়ার্ড তৈরি বা আপডেট করার পর তা শিক্ষককে না দিয়ে বারবার তার কাছে ধরনা দিতে বাধ্য করেন।
সম্প্রতি আইসিটি-ইন-এডুকেশন প্রশিক্ষণে সিনিয়র শিক্ষকদের বদলে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে জুনিয়র শিক্ষকদের সুযোগ দিয়েছেন। সব জাতীয় দিবসসহ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে দুই তৃতীয়াংশ হারে অধিকাংশ শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৭-০৮ সালে বিভিন্ন পাড়ায় ইউএনডিপি ১৬টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সংস্থাটি এগুলো পরিচালনা করে। পরে ২০১৭ সালে স্কুলগুলো জাতীয়করণ করা হয়।
স্কুলগুলো হচ্ছে—জামা চন্দ্রপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, হ্লাপাগইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, থোয়াই অংগ্যপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাওয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুনর্বাসনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্রংলাইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুটিয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্নিবারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারাছাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাসুমুইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরাই প্রুপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডলুঝিড়িপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলেক্ষ্যংপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্লোমাসাংপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, লুং লাইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যলয় ও খাব্রেপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলগুলো জাতীয়করণের পর সেগুলোতে কর্মরত ৫৫ শিক্ষককেও জাতীয়করণ করা হয়। তবে ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতা বকেয়া ছিল। এই বকেয়া বেতন পাইয়ে দেওয়ার নাম করেই শিক্ষকদের ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে রোয়াংছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) মুহাম্মদ কামাল হোসেনকে একাধিকবার কল করা হলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অভিযোগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগের সব নথি আনতে পারেননি। পরবর্তীতে সব নথি জমা দেওয়া হলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, বুধবার বিকালে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। পরে তার নির্দেশে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের আবেদনের বিষয়ে তথ্য যাচাই করা হয়। এ সময় অর্থ আত্মসাতের তথ্যপ্রমাণ আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করতে বলা হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।