× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চাঁইপল্লীতে বর্ষার ব্যস্ততা

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৪ এএম

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গোশাইপুর ইউনিয়নের দহেরপাড় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এখন চাঁই তৈরির ধুম। প্রবা ফটো

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গোশাইপুর ইউনিয়নের দহেরপাড় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এখন চাঁই তৈরির ধুম। প্রবা ফটো

ঋতুচক্রে এখন বর্ষাকাল, আষাঢ় মাসের শেষদিক। এরই মধ্যে নদী, খাল-বিলে পানি আসতে শুরু করেছে। প্রতিটি গ্রাম-জনপদেই চলছে বর্ষার নতুন পানিতে মাছ ধরার আয়োজন। যত্ন সহকারে বাঁশের কাঠি দিয়ে চাঁই বুনছেন চার সন্তানের জননী আলেছা বেগম (৪৫)। মাকে সহযোগিতা করছে তার স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা। স্বামী আনছার আলী (৫২) বাঁশ থেকে কাঠি তুলছেন। এ দৃশ্য শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গোশাইপুর ইউনিয়নের দহেরপাড় গ্রামের।

শুধু আনছার আলী বা আলেছা বেগম নন, এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এখন চাঁই নামের মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ তৈরির ধুম। বর্ষাকালে এটাই গ্রামের অনেক মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। আর এ কারণে এলাকাটি পরিচিতি পেয়েছে ‘চাঁইপল্লী’ হিসেবে। এখানে মোট পাঁচ ধরনের চাঁই তৈরি করা হয়। এর মধ্যে তিনপারা, পাঁচপারা, সাতপারা, দুই পুইরে ও গোল চাঁই। এলাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয় চাঁই। 

জেলা বিসিকের তথ্যমতে, শ্রীবরদীর এ গ্রামে পাঁচ শতাধিক পরিবার মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত। আর জেলায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ সরাসরি চাঁই শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

সম্প্রতি দহেরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুম ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন ‘চাঁই’ তৈরির কারিগররা। কেউ বাঁশ থেকে কাঠি তুলছেন, কেউ প্লাস্টিকের চিকন রশি দিয়ে কাঠিতে বাঁধ দিচ্ছেন, আবার কেউবা বাঁশ থেকে তৈরি করছেন বেতি। অনেকেই বংশ পরম্পরায় চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত। সারা বছরই এসব এলাকায় তৈরি হয় নানা ধরনের চাঁই। তবে বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় কাজ। তবে পুঁজির অভাবে অনেকেই চাহিদামতো চাঁই তৈরি করতে পারছেন না। উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এই পেশা। তারা সরকারি সহযোগিতার দাবি জানান।

দহেরপাড় গ্রামের চাঁইশিল্পী আক্তার আলী (৪৫) জানান, উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর তেমন লাভ থাকে না। বিক্রি হলেও বাঁশ, বেত ও রশির দাম দিগুণ বেড়ে গেছে। ফলে আমাদের লাভ থাকে না। আগে ময়মনসিংহ থেকে যে পাইকাররা আসত, তারাও কম দাম বলে; তাই লোকসান হয় এখন।

গ্রামের আব্দুস সাত্তার মিয়া (৬৮)। ৫০ বছর ধরে চাঁই তৈরি করছেন তিনি। বাপ-দাদার কাছ থেকে শেখা এ ব্যবসায় এখন ধস নেমেছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে সাত্তার মিয়া বলেন, ‘কারেন্ট জাল আর ট্রেন জাল নাইম্মা (বাজারে আসায়) এখন আর আগের মতো চাঁই বিক্রি হয় না। এসব জাল সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও দেদার খালে-বিলে ব্যবহার হয়। বাজারে এসব জাল কম দামে বিক্রি হওয়ায় চাঁইয়ের চাহিদা কমে গেছে।’

একই কথা জানান আব্দুল মতি মিয়া (৪২)। তিনি বলেন, ‘ট্রেন জাল একবার কিনলে ম্যালা দিন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এ জালে কেবল মাছ নয়, পানিতে থাকা সকল প্রকার পোকামাকড় আটকা পড়ে এবং মারা যায়। দোকানদাররা অবাধে এই জাল বিক্রি করছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না। তা ছাড়া ‘চাঁই’ তৈরির মালামালের দাম এখন দিগুণ। তাই অল্প পুঁজিতে এখন ব্যবসা করা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসা ফের চাঙ্গা হতো।’ 

দহেরপাড়ের জহুরা বেগম (৫০) বলেন, ‘বাপুরে ট্রেন জাল নাইম্মা আমগোর কপাল পুড়ছে। এই চাঁই বানাইয়া পুলাপান, নাতি-নাতনি নিয়া সংসার চলত। এখন পেট আর চলে না।’ তাই বাধ্য হয়ে এলাকার অনেকেই এখন অন্য পেশায় চলে গেছে।

স্থানীয় পাইকার শামছুল হক জানান, প্রকারভেদে একেকটা চাঁই তৈরিতে রশি খরচ হয় ৩০ থেকে ১৫০ টাকা, বাঁশের দামও বেশি। পাইকারি বিক্রি হয় ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। জেলার শ্রীবরদী বাজার, ঝগড়ার চর বাজার, কামারের চর বাজার, নয়ানী বাজার, ঝিনাইগাতী বাজারে বিক্রি করা হয় চাঁই।

প্রাণীবিদ সাদিয়া জাহান তণু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কারেন্ট জাল বা চায়না জালে এমন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যার গন্ধে জলাশয়ের মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা যায়। ব্যাঙ, সাপ, কেঁচো, কাঁকড়াসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী এই কারেন্ট জালের ফাঁদে আটকে ও গন্ধে মারা যায়।’

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আযাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চায়না নেটের কারণে চাঁইশিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়ছে। অল্প পুঁজিতে এখন আর চাহিদা অনুযায়ী চাঁই তৈরি করতে পারছেন না কারিগররা।’ 

জেলা বিসিক কর্মকর্তা বিজয় দত্ত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, শ্রীবরদীর একটি গ্রামেই অর্ধসহস্রাধিক মানুষ চাঁই তৈরিতে জড়িত। আমরা উদ্যোক্তাদের পাশে আছি। ক্ষুদ্রঋণ ও পরামর্শ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাসের কথা জানান এ কর্মকর্তা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা