নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩ ১৭:৪৬ পিএম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩ ২০:১৮ পিএম
নিজের গড়ে তোলা গরুর খামারে নজরুল ইসলাম। প্রবা ফটো
বাবার জমি বিক্রির আট লাখ টাকা খুইয়ে পাঁচবছরে কয়েকবার দাঁড়িয়েছেন ইতালির দূতাবাসে। তাতেও মেলেনি ইতালির ভিসা। বাবার পতিত জমিতে ২০১৫ সালে চারটি গরু দিয়ে শুরু করেন ভাগ্য বদলের চেষ্টা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজ সফল তিনি।
তার নাম মো. নজরুল ইসলাম মানিক। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর হাজারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীরহাট গ্রামের বাসিন্দা। নজরুল খামারের আয় থেকে দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ভাইকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন উপজেলার নতুন খামারিরা। প্রায় প্রতিদিনই লোকজন আসেন তার কাছে। নেন খামার সম্পর্কে নানা পরামর্শ।
সরেজমিনে তার খামারে দেখা যায়, বাড়ির সামনে তিন একর জমির ওপর নির্মিত কেএন এগ্রো ফার্ম। প্রবেশ পথের বাম পাশে রয়েছে দুটি এবং ডান পাশে রয়েছে একটি টিনের শেড। শেডের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চা। খামারের ভেতর-বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মশা-মাছি আর পোকামাকড় প্রতিরোধেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
খামারের মালিক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমি ২০১৫ সালে খামার শুরু করি। দেশের বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ভাগ্য সহায় হয়নি। চারটি গাভী থেকে এখন ২০২৩ সালে আমার ১৮টি দুধের গাভী আছে। প্রতিদিন ১৫০ লিটার দুধ বিক্রি করি। ২০১৭ সাল থেকে ১০টা গরু দিয়ে মোটাতাজাকরণ শুরু করি। ২০২৩ সালে এখন আলহামদুলিল্লাহ আমার ১৭৫টি কোরবানির গরু রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, প্রায় পাঁচ বছর বিদেশ যেতে চেষ্টা করেছি। প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা নষ্ট করেছি। কয়েকবার অ্যাম্বাসিতে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু ইতালি যেতে পারি নাই। বলা যায়, ভাগ্য সহায় হয়নি। এখন ১০ জন শ্রমিক আমার খামারে কাজ করে। অর্গানিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়। আমি নিজেই ঘাসের চাষ করেছি।
খামার মালিক বলেন, 'খামারে ৭৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত গরু আছে। আমরা লাইভ ওয়েটেও গরু বিক্রি করি। ঢাকা, চট্টগ্রামে আমাদের গরু যায়। যারা গরু কিনবেন ভালো গরু পাবেন। আমি ভালো গরুর মাংস খেতে পছন্দ করি। তাই আমি চাই, অন্য ভাইয়েরাও ভালো গরুর গোশত খাবে।'
গো খাদ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, 'উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে আমরা সব সময় সহযোগিতা পাই। তবে বর্তমানে খাদ্যের দাম অনেক বেশি। যেভাবে খাদ্যের দাম বেড়েছে সেভাবে গোশত বা গরুর দাম বাড়েনি। তাই সরকারের উচিত গরুর খাদ্যের দাম কমানো। খামারিদের বাঁচাতে খাদ্যের দাম কমাতে হবে। বাইরের গরু যদি দেশে না আসে তাহলে খামারিরা বাঁচবে। খামারি বাঁচলে দেশ বাঁচবে। প্রাণিসম্পদ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।'
গরু কিনতে আসা মাওলানা আহমেদ বলেন, 'আমার বন্ধুর খামার থেকে প্রতিবছর আমিসহ অন্যান্য বন্ধুরা ২০-২৫টা গরু কিনি। সে অনেক কষ্ট করে সফল হয়েছে। তার গরুগুলো ভালো এবং মাংসও ভালো। পুরো কোম্পানীগঞ্জের মধ্যে কম দামে ভালো গরু এখানে পাওয়া যায়।'
চরহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন সোহাগ বলেন, লেগে থাকলে সফলতা আসে। নজরুল ইসলাম পরিশ্রমী খামারি তাই সফলতা পাচ্ছেন। এখন অনেক বেকার যুবকের অনুপ্রেরণা। আমার সাথে সব সময় যোগাযোগ হয়। আমি নজরুল ইসলামের সফলতা কামনা করছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাসলীমা ফেরদৌসী বলেন, নজরুল ইসলাম বিদেশ যাওয়ার বহু চেষ্টা করেও যেতে পারেননি। প্রাণিসম্পদে আস্থা রেখে তিনি বর্তমানে সফল। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সকল অনাবাদি জমিকে আবাদি জমিতে পরিণত করার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন নজরুল ইসলাম। তিনি এখন অনেকের অনুপ্রেরণা।