× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আনোয়ারুজ্জামান এলেন দেখলেন জয় করলেন

চয়ন চৌধুরী, সিলেট

প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩ ১২:৪২ পিএম

নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

এমন ঘটনাকেই মনে হয় ‘এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন’ বলা হয়। দীর্ঘ প্রবাসজীবনের ফাঁকে ফাঁকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিয়মিত দেশে আসা-যাওয়া করতেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও চেয়েছিলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও সিলেট নগরীর রাজনীতিতে সেভাবে আনোয়ারুজ্জামানকে সক্রিয় দেখা যায়নি। কিন্তু ছয় মাস আগে চমক দিয়ে নগর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর আওয়ামী লীগের হয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়রের চেয়ার পুনরুদ্ধার করলেন তিনি।

গত ১০ বছর ধরে নগর ভবনের শীর্ষ চেয়ার দখল করে আছেন বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত মেয়র আরিফ নেতৃত্বাধীন সিসিকের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ রয়েছে। 

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যখন ‘মনোনয়ন পাচ্ছেন’ গুঞ্জনের মধ্যে দেশে এলেন; সিলেট আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই তা আমলে নেননি। এমনকি ‘বহিরাগত’ বলে তাকে মেনে নিতেও তারা রাজি ছিলেন না। গত ৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন সিলেটসহ দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও পরিস্থিতি একই ছিল। 

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে একজন ক্রীড়া সংগঠকসহ স্থানীয় ১০ জন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন। তবে গুঞ্জনকে সত্য প্রমাণিত করে আওয়ামী লীগ প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামানকে নৌকার মাঝি বেছে নিলে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিস্ময়, ক্ষোভ, হতাশা দেখা দেয়। এমনকি আনোয়ারুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়র পদে সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নাম বিদ্রোহী হিসেবেও আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলের কঠোর অবস্থানের ফলে পদবিধারী বা গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কেউ সে পথে হাঁটেননি। 

সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সর্বশেষ ভিপি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল হানিফ কুটু মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তিনি আলোচনায় আসতে পারেননি। ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেন আনোয়ারুজ্জামান। মেয়র পদে সব মিলে আটজন প্রার্থী থাকলেও কার্যত কেউই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সে অর্থে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি। এজন্য দলীয় ঐক্যের কথাই বলেছেন বিজয়ী প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান।

যদিও প্রকাশ্যে দলীয় ঐক্য দেখা গেলেও নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল ছিল। এমনকি বিরূপ আবহাওয়ায় কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিয়েও শঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত ৪৬ শতাংশের বেশি ভোট বলছে, ভোটারদের উপস্থিতি ভালোই ছিল। বুধবার ভোটের দিনেও কেন্দ্র ঘুরে ভোটারের উপস্থিতি বেশ দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর বর্ধিত অংশের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এমনকি ইভিএমে ভোটে দেরি হলেও ভোটাররা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। এতে প্রাথমিকভাবে আনোয়ারুজ্জামানকে মেনে নিতে অস্বীকার করা নেতারাও স্বস্তি পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

২০১৮ সালের সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পর সিলেট আওয়ামী লীগের বিভেদের বিষয়টি সামনে এসেছিল। সেই সময় পাঁচ নেতাকে শোকজ করার কয়েক মাসের মধ্যে জেলা ও মহানগরের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এবারের নির্বাচনে ব্যর্থ হলেও শীর্ষ নেতাদের ওপর শাস্তির খড়গ নেমে আসার শঙ্কা ছিল। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলের ‘খন্দকার মোশতাকদের’ বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। এসব সতর্কবার্তা শেষ পর্যন্ত নৌকার পক্ষে সব নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত তিনজন মধ্যম সারির নেতা জানিয়েছেন। পদ-পদবি বাঁচাতে অধিকাংশ নেতাকর্মী মাঠে সক্রিয় ছিলেন।

পুরো নগরীকে চার অঞ্চলে ভাগ করে নৌকার প্রচারের জন্য শীর্ষ চার নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এতে নিজের এলাকায় নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার চ্যালেঞ্জ ছিল তাদের সামনে। মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, বিএনপি ভোট বর্জন করায় দলীয় প্রার্থীর জন্য নির্বাচন সহজ হয়ে গিয়েছিল। তবে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ-হতাশা নিয়ে শঙ্কা ছিল। এমনকি সরকারবিরোধী ভোটব্যাংক নিয়েও নানা গুঞ্জন শোনা যায়। 

তবে মহানগরের একজন সহসভাপতি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সরে যাওয়ার পর বিরোধী ভোট এক বাক্সে হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ব্যক্তিগত নানা বিষয় ভাইরাল হওয়ায় তিনি পিছিয়ে পড়েন। এজন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান মিয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়েছেন।

গত বুধবার রাতে ফল ঘোষণার পর নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান আওয়ামী লীগকে বিজয় উৎসর্গ করেন। মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ায় তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। তাকে ‘আপন করে নেওয়ায়’ নগরবাসীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, নগরপিতা নয়, সেবক হয়ে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি। দলীয় বিভেদের বিষয়টি বিভিন্ন সময় সামনে এলেও আনোয়ারুজ্জামান বারবার সিলেট আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ বলেও দাবি করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেছেন, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর সিসিকের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন জনের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে ব্যস্ততায় কেটেছে। সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, সবার সহযোগিতায় তিনি তার নির্বাচন-পূর্ব ঘোষিত ২১ দফা ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর।

গতকাল সকালে নগরীর চালিবন্দরের বাসায় গিয়ে সিসিকের কর্মকর্তারাও নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ও শুভেচ্ছা জানান। সিলেট সিটি করপোরেশন তার নেতৃত্বে উন্নয়নের নতুন যুগে প্রবেশ করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা। এ সময় আনোয়ারুজ্জামান বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিলেটবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হলে নগর ভবনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত অভিজ্ঞ। সবার অভিজ্ঞতার আলোকে সিলেট নগরবাসীর সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্যই আমাকে মানুষ ভোট দিয়েছেন। আমি আশাবাদী, আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।’

এ সময় সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আলী আকবর, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান প্রমুখ। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা