যশোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩ ০৯:১৬ এএম
স্ত্রী রহিমা খাতুনের সঙ্গে ক্রিস্ট মার্ক হোগল। প্রবা ফটো
পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস্ট মার্ক হোগলের (৬৪) জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে। চাকরির সুবাদে থাকতেন ভারতে। সেখানকার খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। সব ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। বিয়ে করেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার এক অজপাড়াগাঁয়ের মেয়ে রহিমা খাতুনকে।
বিয়ের তিন বছর পর ক্রিস্ট হোগল স্ত্রী রহিমাকে নিয়ে যান চীনে। সেখানে পাঁচ বছর কাটিয়ে আবার চলে আসেন কেশবপুরের মেহেরপুর গ্রামে। সেখানেই স্ত্রী রহিমা খাতুনের বাবার ভিটায় গড়ে তোলেন গরুর খামার। পাশাপাশি শুরু করেন কৃষিকাজ। এর বাইরে ঢাকার মিরপুরে তার আমদানি-রপ্তানি ব্যবসাও রয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকালে মেহেরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ক্রিস্ট মার্ক হোগল গরুর খাবারের জন্য মেশিন দিয়ে ঘাস কাটছেন। ওই কাটা ঘাস গরুর খাবারের পাত্রে দিচ্ছেন। সবই করছেন নিজ হাতে। বাড়ির মধ্যে এক পাশে দুগ্ধ খামার এবং অন্য পাশে মাংস উৎপাদনের জন্য গরু মোটাতাজাকরণ খামার।
মার্ক হোগল বলেন, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে এখানে সুখে আছেন তিনি। রহিমাকে বিয়ে করার পর তার যুক্তরাষ্ট্রের স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন। ওই স্ত্রীর ঘরে কন্যাসন্তান বিলেসো (৪২) ও ছেলে দেলেন (৪০) রয়েছে। ছেলেমেয়েরা ইতোমধ্যে বিয়েশাদি করেছেন। তাদেরও সন্তান রয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্ত্রীর নামে ডেইরি ফার্ম করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান তাকে ট্রেড লাইসেন্স দেননি। তিনি আরও জানান, মেহেরপুরে চারতলাবিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবনটি হাসপাতাল করার জন্য অনুমতির চেষ্টা চলছে। অনুমতি পেলে পুরো ভবনটিতে হাসপাতাল চালু করবেন।
হোগলের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, তার বাবা আবুল খায়ের মেহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামে নিজেদের তেমন জায়গাজমি ছিল না। তাদের সংসারে অভাব ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। ৩২ বছর আগে বাবা-মা মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে দেন। স্বামী স্ত্রী-সন্তানদের ঠিকমতো ভরণপোষণ দিতেন না। কারণে অকারণে নির্যাতন করতেন। একদিন তার সাবেক স্বামী নিরুদ্দেশ হন। তাই নিজেদের দুঃখ আর অভাব ঘোচাতে বাবা-মার হাত ধরে পাড়ি জমান ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। নিজেও কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। বাবা শ্রম বিক্রি করতেন। তাতেও তাদের সংসার চলছিল না।
রহিমা জানান, উপায়ন্ত না পেয়ে বেশি রোজগারের আশায় মুম্বাই শহরে চলে যান। সেখানে থাকাকালীন ক্রিস্ট মার্ক হোগলের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই তাকে ভালো লেগে যায় হোগলের। পরে তারা আবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই ভালোলাগাটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নেয়। ছয় মাস প্রেমের পর তারা বিয়ে করেন। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর তারা চীনে চলে যান। সেখানেও প্রায় পাঁচ বছর থেকে কেশবপুরের মেহেরপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন।