× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাক্ষাৎকারে কক্সবাজারের নবনির্বাচিত মেয়র

পৌর নির্বাচনের প্রভাব জেলার রাজনীতিতে পড়বে না

নুপা আলম, কক্সবাজার

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ১৪:২৭ পিএম

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩ ১৯:৫৭ পিএম

মো. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। ছবি : প্রবা

মো. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। ছবি : প্রবা

দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজারের পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতি। গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিজ দলের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীকে হারিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, স্থানীয় রাজনীতিতে যিনি পরিচিত মাবু নামে। 

১৯৮৫ সালে ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি মাহবুবের। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তিনি এজিএস নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে নির্বাচিত হন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্ররাজনীতি শেষে ২০০৪ সালে কাউন্সিলরদের ভোটে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সাল থেকে টানা তিনবার পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে। ২০২২ সালে কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পান জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটির এই সাংগঠনিক সম্পাদক। নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও মেয়র হিসেবে নিজের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক নুপা আলম 

প্রবা : আপনার বিরুদ্ধে যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন, পারিবারিকভাবে তিনি কক্সবাজার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তার আপন ভাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকাকে হারিয়ে। পৌর নির্বাচনেও তেমন কিছু ঘটতে পারে বলে শঙ্কা ছিল অনেকের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে ভিড়েছে নৌকা। আপনার দৃষ্টিতে এ জয়ের নেপথ্য কারণগুলো কী?

মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী : এ বিজয়ের জন্য প্রথমেই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার নেত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এ নির্বাচনে নৌকার এই ঐতিহাসিক জয়ের নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সব সংগঠনের কর্মী, ব্যবসায়ী, হিন্দু ও রাখাইন সম্প্রদায়সহ পৌর এলাকার সকল ধর্মের মেহনতি মানুষের ভালোবাসা। দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রার্থী হিসেবে আমি পৌর এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট ও দোয়া চাওয়ার চেষ্টা করেছি। বিষয়টিকে সাধারণ ভোটাররা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। খুশি হয়ে তারা আমাকে ভোট দিয়েছেন। 

প্রবা : আপনার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিদ্রোহী প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার সহোদরদের মধ্যে কেউ দলীয় পদ হারিয়েছেন, কেউ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে তাদের আধিপত্য রয়েছে। দলের বড় অংশও প্রকাশ্যে তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মাঠে ছিল। নির্বাচনী এই বিবাদের কারণে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে কি না? 

মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী : আমি মনে করি এতে স্থানীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম আমিসহ পাঁচজন। আমরা দলকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম- যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করব। একজন ওই প্রতিশ্রুতি ভেঙে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ভাইও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের সভাপতির পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থীকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধও করেছেন। কিন্তু তারা মানেননি। এর ফলে তারা চার ভাই ও এক বোন দলীয় পদ-পদবি হারিয়েছেন। তারা এখন আর আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাই তাদের ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। তারা বারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাদের আর দলে ফিরিয়ে আনা হবে না- এটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। আর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আমার যা যা করণীয়, আন্তরিকতার সঙ্গে তা করব। 

প্রবা : এবার পৌরসভাসংক্রান্ত আলাপে আসা যাক। পর্যটন শহর কক্সবাজারে সমস্যার শেষ নেই। এসব সমস্যা নিরসনে আপনার পরিকল্পনা কী? কোন কাজটি দিয়ে মেয়র হিসেবে নিজের পথচলা শুরু করবেন? 

মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী : নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭টি দফা বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। এর মধ্যে কয়েকটি দফা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় দুই মাস বাকি। আমি দায়িত্ব পাব বর্ষাকালে। প্রত্যেক বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাতে হয় পৌরবাসীকে। জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েই কাজ শুরু করতে চাই। সবার কথা চিন্তা করে এ কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে চাই। নগরবাসী যেন সহজে পৌরসভাকেন্দ্রিক সেবাসমূহ পেতে পারে, সেজন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এসব সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের একটি নিরাপদ ও নির্ভয় পর্যটন শহর উপহার দিতে চাই।

প্রবা : কক্সবাজার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি শহর হওয়ার পরও পৌরসভার নিজস্ব ডাম্পিং ব্যবস্থা নেই। শহরের এখানে-সেখানে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনার স্তূপ। এ নিয়ে কী করতে চান? 

মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী : ইশতেহারে এ বিষয়টিও কিন্তু উল্লেখ রয়েছে। নিজস্ব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছি। ঘরে ঘরে গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের কথা বলেছি। এসব পরিকল্পনা ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র থাকাকালীন ডাম্পিং স্টেশন বানাতে দুই একর জায়গা কিনেছিলাম। ওই জায়গার পাশে অন্য একটি প্রকল্প থেকে আরও দুই একর জায়গা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই ডাম্পিং স্টেশনের কাজ শুরু হবে। সেখানে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পরিচ্ছন্ন শহর দৃশ্যমান হবে। 

প্রবা : পৌরবাসীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কী করবেন?

মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী : কক্সবাজার পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত প্রিপারেটারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সব সমস্যা সমাধান করে এটিকে কলেজ পর্যায়ের উত্তীর্ণ করা এবং আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে উল্লেখ করেছি। এ ছাড়া পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় পরিচালিত টেকপাড়া আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও কাজ করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এডিপির অধীনে তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর কাজ চলমান। তিন-চার মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। পরবর্তীতে প্রতি ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের চেষ্টা করব। 

প্রবা : স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি দেশ ও বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরিকল্পিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও নেই শহরে। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি না?

মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী : আমার কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী পৌরসভা থেকে তিন হাজার ব্যাটারিজচালিত ইজিবাইকের (টমটম) লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তিন হাজার ইজিবাইক চললে যানজট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মূলত শহরে ইজিবাইক চলছে ১০ হাজারের বেশি। এগুলো বন্ধ করা হবে। তা ছাড়া শহরের বাহারছড়া মুক্তিযোদ্ধা সরণিসহ (সায়মন রোড) বেশ কয়েকটি এলাকায় অবৈধ পার্কিং স্টেশন পরিচালিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও নালা দখল করে যত্রতত্র যারা এসব অবৈধ স্টেশন পরিচালনা করছেন, আগামী আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তাদের নিজ দায়িত্বে সরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। না হলে আমি কঠোর হব। 

প্রবা : পৌরবাসীর কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী : আধুনিক, স্মার্ট ও পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে সবার সহযোগিতা চাই। যেভাবে দোয়া ও ভালোবাসা দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, সেজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি পৌরসভার খাদেম হিসেবে সেবা করে যাব।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা