বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩ ১২:১১ পিএম
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৩ ১৩:২৫ পিএম
ফজরের নামাজের পর এসেও ওএমএসের আটার লাইনে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন আবুল হোসেন। কেননা ততক্ষণে নির্ধারিত ২৫০ জনের কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে। বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি আমতলার মোড়ে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক ওই লাইনে আর কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য হ্যান্ডমাইক নিয়ে তৎপর স্থানীয় লতিফুর রহমান।
আবুল হোসেনের মতো লাইনে দাঁড়াতে না পারা শতাধিক নারী-পুরুষকে দূরে থাকার জন্য লতিফুর রহমান বারবার হ্যান্ডমাইকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জরিনা খাতুন নামে ষাটোর্ধ্ব এক নারী। সাতসকালে এত লোক সেখানে কীভাবে এলো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই নারী।
তখন লাইনে দাঁড়ানো আফসার আলী নামে একজন বলতে শুরু করেন, ‘তোমরা তো একন অ্যালা (এখন এলে)। হামরা যে কাল রাত ৮টার দিকে আচ্চি (এসেছি)। সারা রাত মশার কামড় খ্যায়া আমরা এই লাইনে বসে আছি।’
সেউজগাড়ি মণ্ডলপাড়ার নেহার বানু বলেন, ‘আমি পরপর তিন দিন সকালে আচ্চিনু (এসেছিলাম)। কিন্তু আটা পাইনি। তাই এবার কাল রাত ১১টার সময় লাইনোত (লাইনের মধ্যে) দাঁড়াইছি।’
সরকারের ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় ৯৬ টাকায় ৪ কেজি আটা পেতে শত শত নারী-পুরুষ এভাবেই নির্ধারিত দিনের আগের রাত থেকে সেউজগাড়িসহ শহরের পাঁচটি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যান। অন্য চার পয়েন্ট হলো শহরের গোয়ালগাড়ি এলাকায় মোস্তফাবিয়া মাদ্রাসা মোড়, চেলোপাড়া, বৃন্দাবনপড়া ও বনানী মোড়। সাধারণত সকাল ৯টার দিকে আটা বিতরণ করা হয়। কিন্তু স্ব স্ব এলাকার জন্য নির্ধারিত ২৫০ জনকে বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে ভোর ৫টা থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে টোকেন বিতরণ করা হয়। পরে নির্ধারিত ডিলার সেই টোকেনের মাধ্যমে প্রত্যেকের কাছে ৪ কেজি করে আটা বিক্রি করেন।
সেউজগাড়ি এলাকার খাদ্য অধিদপ্তরের ডিলার সোনিয়া বেগম জানান, বাজারে প্রতি কেজি আটা ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ওএমএসের ৪ কেজি আটার দাম মাত্র ৯৬ টাকা। বাজারের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ আটা কিনতে ভিড় করছে। তাদের সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
সেউজগাড়ি এলাকায় খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে কর্তব্যরত নন্দীগ্রাম উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আবু মুসা জানান, বগুড়াসহ সারা দেশে ওএমএসের মাধ্যমে আটা বিক্রির কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু তাতে দেখা গেছে যে, ডিলারদের নামে বরাদ্দ করা আটার অর্ধেকই অবিক্রীত থেকে যায়। সেটা যাতে না হয় অর্থাৎ প্রত্যেকেই যাতে নির্ধারিত মূল্যে আটা কিনতে পারে সেজন্য সরকারিভাবে সারা দেশে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বগুড়া শহরের আগের ১৩টি পয়েন্টের মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য পাঁচটি পয়েন্টের প্রতিটিতে ২৫০ জনের মধ্যে ১ মেট্রিক টন আটা বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২৪ টাকা কেজি হিসেবে প্রত্যেকের ৪ কেজি করে আটা কেনার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৭ জুন শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ (১৩ জুন)। এ কার্যক্রমে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। খুব শিগগিরই হয়তো এটা আগের মতো ১৩টি পয়েন্টে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তখন হয়তো কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না।’