শ্রমিক লীগ নেতার দাপট
সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩ ১২:০৬ পিএম
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ইউনিয়নে স্কুলের শিক্ষক কামরুন্নাহারের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছেন স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা বেলাল হোসেন। প্রবা ফটৈা
কর্মসূত্রে রাজধানীতে থাকেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক কামরুন্নাহার। ভবিষ্যতের অবসর জীবনের কথা চিন্তা করে এক টুকরো জমি কিনেছিলেন সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ইউনিয়নের বগুড়া-পাবনা মহাসড়কের পাশে।
কিন্তু তার অনুপস্থিতির সুযোগে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা বেলাল হোসেন সেই জমির অর্ধেকেরও বেশি দখল করে নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সেখানে বাড়ি নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছেন তিনি। নিজের কেনা জায়গায় যেতে পারছেন না শিক্ষক কামরুন্নাহার।
গত ২০১৬ সালে হাটিকুমরুলের বাহেড় আলী প্রামাণিকের সন্তানদের কাছ থেকে পাঁচ ডেসিম্যাল জমি কিনেছিলেন কামরুন্নাহার। তবে চাকরির কারণে তাকে আর তার স্বামী আব্দুল হান্নান দুজনকেই ঢাকায় থাকতে হয়। এরই মধ্যে ২০২২ সালে প্রতিবেশী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন তার নিজের জায়গায় বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি কামরুন্নাহারের জায়গার ৩ দশমিক ৫০ ডেসিম্যাল অংশ দখল করে নেন এবং সেখানকার গাছপালা কেটে ফেলেন।
এ খবর জানতে পারার পর কামরুন্নাহার তার জায়গা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলেও বেলাল হোসেন ক্ষমতা খাটিয়ে নির্মাণকাজ চালিয়ে যান। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রামের মাতব্বররা একাধিকবার শালিসে বসেও সমাধান করতে পারেননি। কামরুন্নাহার বাধ্য হয়ে গত ৩ এপ্রিল উল্লাপাড়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। গাছ কাটার জন্যও তিনি আরেকটি মামলা করেন। এরপর থেকে বেলাল হোসেন এই পরিবারকে হত্যার হুমকিসহ নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। এ ঘটনায় পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আদালত থেকে স্থাপনা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেলাল হোসেন রাতের আঁধারে বাড়ি নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য
বেলাল হোসেনের প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বেলাল হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যের জমি দখল, মারধর, চাঁদাবাজি ও গ্রামবাসীকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। তার প্রতিবেশী আব্দুল কাইয়ুম সরকার জানান, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেলাল হোসেন জমি দখল থেকে শুরু করে নানা অনৈতিক কাজ করে থাকেন। কেউ কিছু বললে তার ওপর অত্যাচার চালানো হয়।
প্রতিবেশী সাবিনা জানান, আগে থেকেই দেখে আসছি এটি কামরুন্নাহারের জমি, কিন্তু বেলাল বাড়ি করার সময় জোর করে জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক জানান, বেলালের বিরুদ্ধে কথা বললে দলের লোকজন নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা করেন। তাই ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলে না।
ভুক্তভোগী শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আমার জমিতে বাড়ি নির্মাণ করছেন বেলাল হোসেন। তার ক্ষমতা থাকায় আমরা কিছু করতে পারছি না।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, নিয়ম অনুসারেই আমি আমার কাজ করছি। আদালতে হাজিরা দিয়ে নিজের পক্ষে কাগজপত্র জমা দিলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম বলেন, ‘এ নিয়ে একাধিকবার শালিসে বসা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত না মানায় আমরা কিছু করতে পারিনি। এখন এটি আদালতে বিচারাধীন।’
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে সরকারের উচ্চ মহল বিষয়টি নজরে নিয়ে দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা করছেন ভুক্তভোগীরাও।