ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩ ১১:৫৮ এএম
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ সড়কের নির্মাণসামগ্রী রেখে দখল করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়েই রাখা হয়েছে সড়ক সংস্কারের নির্মাণসামগ্রী।
মাঠের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রাখা নির্মাণসামগ্রীর কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা। এ ছাড়াও স্কুল চলাকালীন বিটুমিন পোড়ানোয় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানান, সাহেদ হোসেন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক সংস্কারের নির্মাণসামগ্রী রেখে স্কুল মাঠটি দখল করে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যালয় চলাকালীন আগুন জ্বালিয়ে বিটুমিন পোড়াচ্ছে। এত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও শব্দে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাশে থাকা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।
এদিকে মাঠ বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক শিশুরাও নিতে পারছে না প্রস্তুতি। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাঠটি ছেড়ে দিতে বললেও তা আমলে নেননি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউই।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গায় ইটের কংক্রিট, বালু, মাটি, এক্সকাভেটর, বিটুমিনের ড্রাম স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সারা মাঠে ছোট ছোট কংক্রিট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। পাশে স্থাপন করা হয়েছে বিটুমিন গলানোর চুলা। চুলায় আগুন জ্বালালেই ধোঁয়া বিদ্যালয়ের ভবনে প্রবেশ করে।
চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, ‘আমি বিশেষ কাজে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। এসে দেখি বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ের মাঠের বড় অংশ দখল করে এখানে রাস্তার কাজের ইট, বালু, বিটুমিন, মেশিনসহ জিনিসপত্র রাখা হয়েছে।’
জানতে চাইলে ঠিকাদারের লোকজন জানান, চাঁদপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। অথচ মাঠটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, এলাকার কিছু ছেলের সঙ্গে কথা বলে মাঠটি ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে বিদ্যালয় চলাকালীন তারা বিটুমিন জ্বাল দেয়। এতে কালো ধোঁয়া এবং প্রচণ্ড শব্দও হয়। তা ছাড়া পুরো মাঠেই ইটের টুকরা পড়ে আছে। বাচ্চারা এখানে খেলাধুলা করতে পারে না।
এমদাদুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে শিশুদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য মাঠটি ছেড়ে দিতে বললেও তা আমলে নেয়নি কেউ। চাঁদপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল হক বলেন, ‘মাঠটি পুরোটাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তাই আমাদের অনুমতি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী শাহেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কাজটি নিয়ে আমি ধরা খেয়েছি। ক্ষতির মধ্যেও কাজটি করছি। আশপাশে কোনো জায়গা নেই যেখানে এই সামগ্রীগুলো রেখে কাজ করব। বিদ্যালয় মাঠটি ফাঁকা ছিল সংশ্লিষ্ট ও এলাকার কিছু যুবকের সঙ্গে কথা বলে মাঠটি ব্যবহার করছি। এলাকার ছেলেরা দাবি করেছে সেখানে ফুটবল খেলার একটি বারপোস্ট তৈরি করে দিতে।’
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরদার বলেন, আশপাশে কোনো খোলা স্থান নেই। রাস্তার কাজ হচ্ছে। কোথায় রেখে কাজ করবে? দুই দিনের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ হবে। ঠিকাদারকে বলা হয়েছে, দ্রুত নির্মাণসামগ্রী বিদ্যালয় মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে।