কক্সবাজার পৌর নির্বাচন
কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩ ২০:৫৫ পিএম
বিজয়ী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। প্রবা ফটো
কোনো ধরনের গোলযোগ, অভিযোগ, উত্তেজনা, অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে। কক্সবাজার পৌরসভার এবারের নির্বাচনকে স্মরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সকল প্রার্থী, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে মেয়র পদে শেষ হাসি হেসেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দুই প্রভাবশালী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) মাসেদুল হক রাশেদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলেছিল, হয়েছেও তাই। নৌকা প্রতীকে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী মাত্র ৪ হাজার ২৮৮ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮১৮। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাসেদুল হক রাশেদ নারকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৫৭৪ ভোট।
১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রের সবগুলোতে ভোট গণনা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলের নির্বাচন সমন্বয় কেন্দ্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন বেসরকারিভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। পরে এক প্রতিক্রিয়ায় মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণ ভোটাররা আন্তরিকভাবে নৌকা প্রতীক ও আমাকে ভালোবেসে নির্বাচিত করেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’ তবে ফল ঘোষণার পর আশপাশের কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের দেখা পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৭টিতে ঘুরে দেখা গেছে, শান্তিপূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোনো প্রার্থী, এজেন্ট বা ভোটারদের অভিযোগ ছিল না। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোটারদের ভোট দিতে দেখা গেছে। ভোটা গ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তাদেরও কোনো অভিযোগ ছিল না। কোনো প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালেট ছিনিয়ে নেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। যারা ভোট প্রদান করেছেন, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের কেন্দ্রে থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১২টি ওয়ার্ডে ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ৭ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ১২টি টিম ও ১২শ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। ৪৩টি কেন্দ্রের ২৪৫টি কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ছিল বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম দুপুরে বলেন, ‘সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ চলছে। কোথাও গোলযোগের খবর নেই। শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ ধরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’
বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টায় ভোট দেন মোহাম্মদ জুনাইদ। তিনি বলেন, ‘ভোট গ্রহণ অত্যন্ত ধীরগতি। তবে ভোট প্রদানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।’ সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বেলা ১২টার দিকে বলেন, ভোটারদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কিছুটা ধীরগতি হলেও তা দ্রুত করার চেষ্টা করছেন তারা।
কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৯৫ হাজার ৩৮৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫০ হাজার ১৮৪ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ২০২ জন।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন যারা
সংরক্ষিত ৪টি নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন, ১,২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাহেনা আকতার, ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডে ইয়াসমিন আকতার, ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডে জাহেদা আকতার এবং ১০, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নাছিমা আকতার বকুল। ১২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে আকতার কামাল, ২ নম্বর ওয়ার্ডে মিজানুর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমিনুল ইসলাম মুকুল, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এহসান হক, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাহাব উদ্দিন সিকদার, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ওমর সিদ্দিক লালু, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওসমান সরওয়ার টিপু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রাজবিহারী দাশ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে হেলাল উদ্দিন কবির, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সালাউদ্দিন সেতু, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নুর মোহাম্মদ মাঝু ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এমএ মঞ্জুর।