পাওনা টাকার দাবিতে কবর খুঁড়ে লাশ উত্তোলনের চেষ্টা

রংপুরে পাওনা টাকার দাবিতে কবর খুঁড়ে এক নারীর মরদেহ উত্তোলনের চেষ্টা হয়েছে। সোমবার (১২ জুন) সকালে তারাগঞ্জ উপজেলার খিয়ারজুম্মা কবরস্থানে ওই ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ, নিহত নারীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল গফুর অসুস্থ থাকায় স্ত্রী শাহেদা বেগম দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। তিনি সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক ছিলেন। শাহেদা বেগম ঈদের দুই দিন আগে স্ট্রোক করেন এবং ৭ জুন মারা যান। তাকে খিয়ারজুম্মা কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সোমবার সকালে শাহেদার বাড়িতে যান একই গ্রামের জোনায়েদ হোসেনের স্ত্রী রাসেনা বেগম। তিনি দাবি করেন, শাহেদার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবেন। শাহেদার ছেলেমেয়েরা টাকা দিতে রাজি না হলে কবর খুঁড়তে যান রাসেনা ও তার স্বামী জোনায়েদ হোসেন। তাদের কবর খোঁড়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা চিৎকার দিলে রাসেনা বেগম ও তার স্বামী পালিয়ে যান। পরে গ্রামের শত শত লোক কবরস্থানে ছুটে যান। পুলিশ পরে রাসেনাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

শাহেদার মেয়ে সাবিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘শাহেদা কখনও ৩০ হাজার, কখনও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবেন বলে দাবি করেন। আমাদের থাকার জায়গা ছাড়া কোনো সহায়-সম্বল নেই। রাসেনা যে টাকা দাবি করছে তা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। মা কখনও তাদের বলেনি, রাসেনা তার কাছে টাকা পাবে। তাই তাকে বলি টাকা যদি পান তাহলে মাফ করে দিয়েন। কিন্তু তিনি তা না মানায় রাগ করে বলি, যার কাছে টাকা পান তার কাছ থেকে নেন। এরপর রাসেনা ও তার স্বামী মায়ের কবর খুঁড়তে যান।’

তিনি বলেন, ‘টাকা পাবে কোনো প্রমাণ নেই। অথচ তারা আমার মায়ের কবরস্থানে লাশ বের করার জন্য কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়েছে। এলাকার শত শত মানুষ কবরস্থানে গিয়ে দেখেছে। আমি তাদের সঠিক বিচার চাই।’

রাসেনা বেগম বলেন, ‘৬ মাস আগে শাহেদার ছেলে সহিদার রহমানের জামিন করার সময় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন শাহেদা। আমি ৫০ হাজার টাকা গরু বিক্রি করে ও ৭০ হাজার টাকা ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে দিয়েছি। টাকা না দিয়ে এখন আমার নামে বদনাম ছড়াচ্ছে।’

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ’ঘটনাটি জানতে পেরে সরেজমিনে গিয়ে কবরের মাটি সরানো দেখেছি। সেখানে হাজার উৎসুক মানুষ জড়ো হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাসেনাকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’