× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বগুড়ায় বিচারপ্রার্থীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

বগুড়া অফিস

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩ ১২:১৪ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় আদালতের সঙ্গে জালিয়াতি ও প্রতারণা করে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এটি চলতে থাকলেও জড়িতদের শনাক্ত কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কখনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি জালিয়াতির শিকার এক বিচারপ্রার্থীর পক্ষে আদালতে মামলা দায়েরের পর ওই চক্রের হোতাদের কয়েকজনের পরিচয় উন্মোচিত হয়েছে। 

ওই মামলার সূত্র ধরেই বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা নিশ্চিত হয়েছেন, আদালত অঙ্গনে কর্মরত ইউনুস আলী নামে এক মোহরার (আইনজীবীর সহকারী) এবং লিমন, আইয়ুব ও রিপন নামে তার তিন ভাই ওই জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা।

বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ গত ৭ জুন জানান, মোহরার ইউনুসের বিরুদ্ধে জালিয়াতির ৭টি ঘটনায় প্রায় ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু মোহরার ইউনুসের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে এবং আত্মসাৎ করা টাকাগুলো সে ৭ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেছে, সেজন্য তার বিরুদ্ধে আপাতত কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে মোহরারের সনদ বাতিলসহ ইউনুসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইনজীবী এবং আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত চেক প্রত্যাখ্যানের (চেক ডিজঅনার) মামলাগুলোতেই জালিয়াতির ঘটনাগুলো ঘটছে। ওই মামলায় কেউ দণ্ডিত হলে আপিল এবং জামিনের জন্য মামলায় বিচার্য হিসেবে তার নামে দাখিল করা ব্যাংকের চেকে বর্ণিত অঙ্কের ৫০ শতাংশ অর্থ নির্ধারিত চালান ফরমের মাধ্যমে বাংকে জমা করতে হয়। চালানের সেই কপি আদালতে দাখিল করলে বিচারক দণ্ডিত ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে আপিল নিষ্পত্তি হলে দণ্ডিত ব্যক্তির জমা দেওয়া অর্থ মামলার বাদী উত্তোলনের সুযোগ পান। তবে জামিন দ্রুত মিললেও আপিল নিষ্পত্তিতে কয়েক বছর লেগে যায়। যে কারণে জালিয়াতির ঘটনাগুলো অনেক দেরিতে জানা যায়।

যে মামলার সূত্র ধরে জালিয়াত চক্রের পরিচয় সামনে আসে

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার কানুপুর পশ্চিম শাহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শিউলি বেগম গত ৫ এপ্রিল জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। তাতে তিনি ২০১৯ সালের চেক প্রত্যাখ্যানের একটি মামলায় তার স্বামী নুরুল নবী শেখের দণ্ডিত হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে বলেছেন, ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলসহ জামিনের জন্য তিনি মোহরার ইউনুস আলী এবং মোহরার হিসেবে কর্মরত তার অপর তিন ভাই লিমন, আইয়ুব ও রিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তারা চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকাসহ মোট ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নেন। এরপর ২০২১ সালের ৯ মে ওই চালানসহ তার স্বামী নুরুল নবী শেখের পক্ষে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

কিন্তু চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম যুগ্ম দায়রা জজ আদালত এক আদেশে জানান যে তার স্বামী নুরুল নবী শেখের জামিনের আবেদনের সঙ্গে দাখিল করা চালানটি জাল। শিউলি বেগম অভিযোগ করেছেন, মোহরার ইউনুস আলী এবং তার তিন ভাই জাল চালান তৈরি করে সোনালী ব্যাংকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা জমা না দিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করেছেন। তার দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। ওই মামলা দায়েরের প্রায় এক মাস পর ৭ জুন কয়েকজন মোহরার এবং আইনজীবী অভিযুক্ত ইউনুস আলীকে আটক করে আইনজীবী সমিতির অফিসে সোপর্দ করেন। পরে ওই দিন বিকালে সমিতির নেতারা তাকে নিয়ে সালিশ করেন।

নুরুল নবী শেখের পক্ষে দাখিল করা একটি চালানসহ মোট ৩টি জাল চালানের কপি প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চালানগুলোতে আদালত এবং ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। 

বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হিসাবরক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম জানান, আপিল নিষ্পত্তির পর মামলার বাদী পক্ষ টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পর জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হচ্ছে। তিনি বলেন, জালিয়াতির একাধিক ঘটনার প্রমাণ পাওয়ার বিষয়গুলো প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করা হয়। তারপর চালানের কপি এবং জামিন আবেদনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে আদালত কয়েকজন আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছেন।

তবে আদালতের কারণ দর্শানোর নোটিসপ্রাপ্ত আইনজীবীদের একজন অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আলম জানান, নুরুল নবী শেখের নামে দাখিল করা চালানে যে স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেটি তার নয়। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। বিষয়টি আমি আদালতকে অবহিত করেছি।’ তবে জাল চালানের ভিত্তিতে জামিনের আবেদনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে আদালতের নোটিসপ্রাপ্ত অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানজিদা খাতুন বলেন, ‘মোহরার ইউনুস যে জালিয়াতি করতে পারেন সেটি আমার জানা ছিল না। আমি সরল বিশ্বাসে তার অনুরোধে একটি জামিনের আবেদনে স্বাক্ষর করেছিলাম।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনুস আলী নিজের এবং মোহরার হিসেবে কর্মরত তার অপর ভাইদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এসবের কিছুই জানি না। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, সামান্য কিছু অর্থ প্রাপ্তির আশায় কিছু আইনজীবী মোহরারদের প্রস্তুত করা নথিগুলোতে চোখ বুজে স্বাক্ষর করেন।

বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছেদ বলেন, ‘আদালত থেকে কয়েকজন আইনজীবীকে শোকজ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের জালিয়াতি বন্ধে আদালত অত্যন্ত কঠোর হয়েছেন। এখন থেকে চালানের মাধ্যমে জমা করা অর্থ ব্যাংকে জমা হয়েছে মর্মে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আদালত কোনো আদেশ দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে আমরাও আইনজীবীদের সতর্ক হতে বলেছি। পাশাপাশি মোহরারদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা