বিএনপি নালিশ করতেই থাকবে, অন্তর্জ্বালা কমবে না : ওবায়দুল কাদের

যেকোনো প্রেক্ষাপট নিয়ে বিদেশিদের কাছে প্রতিদিন নালিশ করা ছাড়া বিএনপির আর কোনো কাজ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। জনগণ সঙ্গে না থাকলে কোনো আন্দোলন হয় না। বিএনপির সঙ্গে পাবলিক (জনগণ) নেই। তাদের আন্দোলন ভুয়া। ৫২ দফা ভুয়া, ২৭ দফা ভুয়া। তাদের আজকে বড় জ্বালা। পদ্মা সেতু হয়ে গেল। মেট্রোরেল চালু হলো। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে। কিছু দিন লোডশেডিং হয়তো থাকবে। সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। বিএনপির অন্তর্জ্বালা কমবে না। নালিশ (বিদেশিদের কাছে) করতেই থাকবে।’ 

রবিবার (৪ জুন) দুপুরে নওগাঁয় আয়োজিত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল জলিলের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আব্দুল জলিলের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ সভা জেলা শহরের নওযোয়ান মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখতে দেখতে বিএনপির আন্দোলনের ১৪ বছর শেষ। ১৫ বছরে পা দিয়েছে। তারা প্রতিদিন ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখে। আমেরিকার কাছে, ইউরোপের কাছে রোজ-রোজ নালিশ করেও কোনো কাজ হয়নি। নালিশ করে তারা পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। তাদের সঙ্গে দেশের মানুষ নেই। বিএনপির প্রত্যেক নেতার প্রধান অপকর্ম হলো মিথ্যাচার। মিথ্যাকে পুঁজি করে তারা শেখ হাসিনার সমালোচনা করে। তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন ঘণ্টা ঘুমান। রাত জেগে কাজ করেন। সারা দিন বসে বসে দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন। সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন। শেখ হাসিনা বিদেশে যান আনন্দ করার জন্য নয়। প্রমোদ ভ্রমণের জন্য নয়। শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি নালিশ করতে যাননি। অথচ তার সফর নিয়ে ফখরুলদের মুখে বাধে না, যা ইচ্ছে তা-ই বলেন। মিথ্যাচার তাদের একমাত্র সম্পদ।’

জ্বালানি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিশ্ব পরিস্থিতি দায়ী উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্যাংশন, যুদ্ধ, নতুন নতুন সংঘাত পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা। বড় বড় দেশগুলো যুদ্ধ করে। একে-অন্যকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সেটার জন্য কষ্ট করতে হয় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর মানুষকে। আজকের এই কষ্টের জন্য আমরা দায়ী নয়। এই কষ্টের জন্য দায়ী বিশ্বের বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতি।’ 

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা কাতারে গিয়ে জ্বালানির যে সহযোগিতা পেয়েছেন, সেটা সংকট থেকে সামনের দিনে উদ্ধার করবে। আপনাদের কাছে চামচাগিরি করব না। যা সত্যি তাই বলব। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। শেখ হাসিনা শান্তিতে নেই। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার চেয়ে গরিব মানুষের আপন আর কেউ নেই। এ দেশে গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে পরিশ্রমী ও দক্ষ প্রশাসক শেখ হাসিনা। ৪৮ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ও সবচেয়ে দক্ষ কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। এই সম্মান বাংলাদেশের মানুষের। আমরা তাকে নেতা বানিয়েছি।’

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল জলিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আব্দুল জলিল দুর্দিনে দলের পতাকা ধরে রেখেছিলেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত হয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমার রাজনীতিক বয়সে আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক দেখেছি, তার মতো নেতৃত্ব আর কারও পাইনি।’

এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক।

স্মরণ সভায় যোগদানের আগে দুপুর ১২টায় নওগাঁ শহরের চকপ্রাণ এলাকায় আব্দুল জলিলের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও দলের অন্য নেতারা। পরে নবনির্মিত নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।