ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩ ১৩:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩ ১৪:৫৮ পিএম
লিচু বাছাই ও গণনার কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। ঈশ্বরদীর মানিকনগর গ্রামের চর কদিমপুর এলাকায়। প্রবা ফটো
চলছে মধুমাস। বছরের এই সময়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে বোম্বাই লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী। রসালো লিচুর জন্য বিখ্যাত এই মোকামে এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে লিচু ভাঙা, বাছাই ও বাজারজাতকরণের কাজ।
তীব্র গড়মে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে এসব কাজ করেন মূলত নারী শ্রমিকরা। বিভিন্ন বাগানে কর্মরত এই নারীরা ঈশ্বরদীতে লিচুকন্যা নামে পরিচিত। কিন্তু প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করা এসব নারী বছরের পর বছর শিকার হচ্ছেন মজুরি বৈষম্যের। পুরুষের তুলনায় ২০০-৩০০ টাকা কম মজুরিতেই কাজ করতে হয় তাদের।
জানা যায়, ভরা মৌসুমে ঈশ্বরদীতে গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার নারী প্রত্যক্ষভাবে লিচুবাগানের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন। তাদের বেশিরভাগই গৃহিণী, দিনমজুর, স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। বাড়তি আয়ের আশায় সারা দিন কাজ করা এসব নারীর মজুরি মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা। অন্যদিকে পুরুষ শ্রমিকরা একই কাজ করে পাচ্ছেন ৬০০-৭০০ টাকা। আকাশচুম্বী নিত্যপণ্যেরে এই বাজারেও পরিবর্তন আসেনি মজুরিতে।
আওতাপাড়ার লিচুকন্যা রোজিনা খাতুন বলেন, ‘বাড়তি আয়ের আশায় বাগানে কাজ করি। সারা দিন কাজ শেষে ৪০০ টাকা হাজিরা পাই। অথচ একই কাজে পুরুষরা পায় ৬০০-৭০০ টাকা। আমরা নারীরা বৈষম্যের শিকার।’
বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী নারীদের পারিশ্রমিক কম জানিয়ে শেফালী দাস বলেন, মজুরি বাড়ানোর দাবি জানালেও বাগানমালিকরা এর চেয়ে বেশি মজুরি দিতে চান না। এ বছর লিচুর ফলন কম, তাই কম পারিশ্রমিকেই কাজ করতে হচ্ছে।
তবে বৈষম্যের কথা মানতে নারাজ বাগানমালিকরা। তাদের যুক্তি, নারীদের তুলনায় পরুষ শ্রমিকরা কিছু বাড়তি কাজ করেন। আর এজন্য মজুরির পরিমাণও কিছুটা বেশি পেয়ে থাকেন পুরুষরা। জয়নগর এলাকার লিচুচাষি খাইরুল বাসার মিঠু বলেন, পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশ কিছু কাজ বাড়তি করতে হয়। তারা গাছের মগডাল থেকে লিচু সংরক্ষণ করেন। যেটা সাধারণত কিছুটা ঝুঁকির কাজ।
সরেজমিনে লিচুবাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, বোম্বাই লিচু পরিপক্ব হয়ে লালচে রঙ ধারণ করেছে। প্রতিটি বাগানেই কাজে নেমেছেন নারী শ্রমিকরা। লিচু উৎপাদন, পরিচর্যা ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নারী কর্মীরা। অনেকটা অন্তরালে থেকে যান লিচু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত লিচুকন্যারা। লিচুকন্যাদের সঙ্গে সঙ্গে বাগানমালিক ও চাষিদের পরিবারের বউ-ঝিসহ নারী সদস্যরাও লিচু বাছাই ও গণনার কাজে অংশ নিচ্ছেন।
জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত লিচুচাষি আবদুল জলিল কিতাব জানান, এখন শ্রমিকের যে সংকট, তাতে নারী শ্রমিক না থাকলে লিচু বাছাই ও গণনার কাজ কঠিন হয়ে যেত। এবার নারীদের মজুরি কিছুটা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে। গত বছর মজুরি ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, নারী-পুরুষ সমান অধিকার থাকলেও কিছু প্রতিবন্ধকতার দিক থেকে বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়। ফলে নারীরা অবহেলিত হয়। একই কর্মঘণ্টায় পুরুষের চেয়ে অর্ধেক মজুরি নিতে হচ্ছে নারীদের। নারীরা যতটুকু কাজ করবে ততটুকুই মজুরি পাবে। যদি এটা বাস্তবায়ন না হয় তবে আমি মনে করি নারীদের প্রতি অন্যায় ও অবহেলার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ করছি। নারীরা পুরুষের তুলনায় কাজও বেশি করেন, অথচ মজুরি কম পাচ্ছেন। তাদের মজুরি বৈষম্য নিয়ে কথা বলছি। এর সমাধান হওয়া জরুরি।’