× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি

গাইবান্ধা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩ ১৩:৩৩ পিএম

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গাইবান্ধায় ক্রমেই বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। প্রবা ফটো

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গাইবান্ধায় ক্রমেই বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। প্রবা ফটো

দেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় খরাপ্রবণতা ক্রমে বাড়ছে। সেচকাজে জেলার ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর চাপ পড়ায় এই সংকট প্রকট হচ্ছে। এতে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পানি।

তাপপ্রবাহসহ টানা অনাবৃষ্টিতে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বিচারে পুকুর-জলাশয়সহ পানির উৎসগুলো ভরাট করায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর খুব নিচের দিকে নেমে গেছে। গভীর নলকূপ দিয়েও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না পানি। কৃষিকাজসহ খাবার পানির সংকটে ভুগছে জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্র এলাকাসহ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের চকরহিমাপুর, খামারপাড়া, সাপমারা, সাহেবগঞ্জ, মেরী, তরফকামাল, কাটাবাড়ী ইউনিয়নের মাহমুদবাগ, বাগদা, বাগদাকলোনি, বেলতলা, গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের তরফমনু, কাইয়াগঞ্জ, পারগয়রা, গুমানীগঞ্জ, ফুলপুকুরিয়া, কামদিয়া, রাজাহার ও শাখাহার ইউনিয়নের অনেক স্থানে পানির স্তর নাগালের মধ্যে নেই। এতে ওই সব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

চলতি বছর ইরি ও বোরো চাষের সেচ নিয়েও বিপাকে পড়েছিলেন ওই এলাকার চাষিরা। বাধ্য হয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট গর্ত খনন করে তার মধ্যে সেচ পাম্প বসিয়ে পানি তুলেছেন তারা। কিন্তু সেখানেও কয়েক দিন পরপর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির সন্ধানে আবারও গভীর গর্ত খনন করে সেচকাজ চালিয়েছেন।

গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা গোপাল মহন্ত বলেন, ‘চাপকলে এমনিতে পানি ওঠে না। তাই টিউবওয়েলের পানি ওঠাতে সাবমারসিবল পাম্প দীর্ঘ সময় ছেড়ে রাখতে হয়।’

কাটাবাড়ী ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের সন্তোষ মোহন্ত বলেন, ‘গাঙের পাড়ে বাড়ি, তবুও নলকূপে পানি পাচ্ছি না। করতোয়া নদীতে স্নান করতে পারলেও খাবার পানির জন্য যেতে হচ্ছে অন্যের বাড়িতে।’

সাপমারা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘নলকূপ বসিয়ে আগে যে স্তরে পানি পাওয়া যেত এখন সে স্তর থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবেশীদের বেশিরভাগ পরিবার তীব্র পানির সংকটে রয়েছে।’

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া প্রসঙ্গে গাইবান্ধা পৌরসভার পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মুরাদজামান রব্বানী বলেন, ‘আগে পাম্প দিয়ে মাত্র ত্রিশ-চল্লিশ মিনিটে একতলা বাড়ির ছাদে ৫০০ লিটারের দুটি পানির ট্যাংক ভরে ফেলা যেত। এ বছর শুকনো মৌসুম শুরুর পর থেকে দুই-তিন ঘণ্টা পাম্প চালিয়ে অর্ধেক ট্যাংক পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুই সপ্তাহ থেকে পাম্প চালিয়ে এক ফোঁটা পানিও পাচ্ছি না। আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়িতে একই অবস্থা। এখন মাটির আরও গভীর থেকে খনন করে নতুন করে পাম্প বসাতে হচ্ছে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাহা আলী বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংকটাপন্ন এলাকাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থায় পাম্প বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

জলবায়ু ও পরিবেশবাদী সংগঠন সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষকরা আরও বেশি করে ভূগর্ভস্থ পানির পাম্প বসাচ্ছেন, যার ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বন উজাড় আরেকটি কারণ। গাছ বৃষ্টির পানি শোষণ করে ধীরে ধীরে মাটিতে ছেড়ে দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। বন উজাড়ে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ঘাটতি হচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনও ভূমিকা রাখছে বলে তারা জানান।

পানির সংকট মোকাবিলায় ভূউপরিস্থ পানির উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে গাইবান্ধা পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল বলেন, ‘গাইবান্ধায় ভূগর্ভস্থ উৎসে তিনটি স্তরের সুপেয় পানি পাওয়া যায়। প্রথম স্তরটি হলো অগভীর জলজ, যা ভূপৃষ্ঠের নিচে ১০ থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। দ্বিতীয় স্তরটি হলো মধ্যবর্তী জলজ, যা ভূপৃষ্ঠের নিচে ৫০ থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। তৃতীয় স্তরটি গভীর জলজ, যা ভূপৃষ্ঠের ১০০ মিটার নিচে অবস্থিত।’

বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হাবীব সাঈদ বলেন, ‘আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে অনেক এলাকায় চাষাবাদে ভূ-উপরিভাগের স্বাভাবিক পানি মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষিব্যবস্থা প্রধানত সেচনির্ভর। এসব সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার পথ একটাই- নদীসহ খাল ও অন্যান্য জলাশয়ে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।’

জলবায়ু পরিষদ গাইবান্ধার সদস্য সচিব জিএসএম আলমগীর বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া পরিবেশ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয়। ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস হিসেবে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টই হচ্ছে এখন ভালো বিকল্প।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা