বরিশাল ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড
মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩ ১৩:২৩ পিএম
বরিশাল নগরীর মূল শহরের পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড। নগরীর সর্বোচ্চ শিক্ষার হার (৮৫ শতাংশ) এই তিন ওয়ার্ডে, যেখানে নগরীতে শিক্ষার হার ৭০ শতাংশের মতো।
ওয়ার্ড তিনটির মধ্যে দুটিতে (১৯ ও ২১নং) সড়ক উন্নয়নের চিত্র যেমন রয়েছে, ঠিক তার উল্টো চিত্রও রয়েছে একটিতে (২০নং)। তবে ওয়ার্ড তিনটিতে জলাবদ্ধতা আর মশার উপদ্রব রয়েছে সমানতালে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সেখানকার বাসিন্দারা। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলরপ্রার্থী হয়েছেন ১২ জন। ওয়ার্ড তিনটিতে মোট ভোটার ২৪ হাজার ৮৯০ জন।
নগরীর নতুন বাজার, বরিশাল কলেজ এলাকা, জালিয়া বাড়ি প্রথম গলি, দ্বিতীয় গলি, নাজির মহল্লা, কালীবাড়ি রোড, সদর হাসপাতাল রোড নিয়ে গঠিত ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। ৯ হাজার ৬৭৬ ভোটারের ওয়ার্ডটিতে সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। তবে প্রধান দুটি সমস্যা জলাবদ্ধতা ও মশার উপদ্রব রয়ে গেছে।
ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, হানিফ চৌধুরী, মেহেদী হাসান, শরীফ উদ্দিন আহমেদ মজুমদার, জহিরুল ইসলাম সুনাম ও শাহ আমিনুল ইসলাম।
নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা আলী আদনান বলেন, ‘পাড়া-মহল্লার দুয়েকটি সড়ক বাদে অন্য প্রধান ও শাখা সড়কগুলো উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় নিরসন হয়নি জলাবদ্ধতার। আর মশার উপদ্রব তো আছেই। মশার যন্ত্রণায় বলতে গেলে দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে থাকতে হয়। গত ১০ বছর ধরে গাজী নঈমুল হোসেন লিটু কাউন্সিলর থাকার পরও এই সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেননি।’
বর্তমান কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয় থেকে সীমিত আকারে যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা দিয়ে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। আমার আগে যারা এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন তাদের আমলের ড্রেনগুলো অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ফলে ভারী বৃষ্টিতে পাড়া-মহল্লার সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আগামীতে নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডে যেটুকু সমস্যা আছে তাও সমাধান করা হবে।’
কাউন্সিলরপ্রার্থী হানিফ চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছরেও এলাকার মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন চোখে দেখেনি। নির্বাচিত হলে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করব।’
কলেজ রোড, কলেজ অ্যাভিনিউ, বিএম কলেজ সড়ক, জিয়ানগরের একাংশ, পশ্চিম কাউনিয়া, বৌদ্ধপাড়া নিয়ে ২০ নম্বর ওয়ার্ড। ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র এখানে। ওয়ার্ড ঘুরে মনে হবে ৫০ বছরেও কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। প্রধান প্রধানসহ পাড়া-মহল্লার সব সড়ক ভাঙাচোরা। ৭ হাজার ৩৩১ ভোটারের এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলরপ্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিল্পব, ওবায়দুল হক ও সরদার মো. শফিকুল হক।
বৌদ্ধপাড়ার বাসিন্দা মানিক হওলাদার বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে যে কয়টা সড়ক রয়েছে প্রত্যেকটি ভাঙাচোরা। এলাকায় রিকশাও ঢুকতে চায় না। বাধ্য হয়ে প্রধান সড়কে নেমে হেঁটে বাসায় আসতে হয়। এ ছাড়া অল্প বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে। নেই সড়কবাতি। মশার যন্ত্রণার কথা আর বলতে হয় না। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে থাকতে হয়ে।’ তার দাবি, দেশের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিএম কলেজের ছাত্রীরা এই এলাকার বিভিন্ন রোডের বাসাবাড়িতে থাকেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে উত্ত্যক্তকারীদের আনাগোনা দেখা যায়।
কাউন্সিলরপ্রার্থী শফিকুল হক বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হতে পারলে ওয়ার্ডে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি এলাকা ইভটিজারমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব।’
নগরীর কলেজ অ্যাভিনিউর একাংশ, গোরস্তান রোড, নিউ গোরস্তান রোড, অক্সফোর্ড মিশন রোড, কমির কুটির, চৌমাথা পুরান পাসপোর্ট গলি ও মুন্সি গেরেজ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সড়ক নিয়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ড। এখানকার রাস্তাঘাট বেশ উন্নত হলেও প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। অল্প বৃষ্টিতেই বিভিন্ন পাড়ামহল্লা ও প্রধান সড়কগুলোয় হাঁটুপানি জমে যায়। ৭ হাজার ৮৯৯ ভোটারের এই ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে লড়ছেন চারজন। তারা হলেন, বর্তমান কাউন্সিলর শেখ সাইদ আহমেদ মান্না, আবু মোহম্মাদ মুসা, মো. তারিকুল ইসলাম ও মু. শাহরিয়ার সাচিব।
ওয়ার্ডের ভোটার শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘এই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অল্প বৃষ্টিতেই প্রধান প্রধান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাঁটু সমান পানি জমে পাড়া-মহল্লায়। প্রধান সড়ক দুটি কিছুটা ভাঙাচোরা ছিল। কিন্তু সেই দুটির কাজ চলমান। এলাকায় পরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ করা গেলে জলাবদ্ধতা ঠিক হবে। যিনি কাউন্সিলর হবেন, তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ করা।
কাউন্সিলরপ্রার্থী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল গত ১০ বছরেও তা হয়নি। আমি নির্বাচিত হতে পারলে পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করব। পাশাপাশি ড্রেনেজব্যবস্থাকে উন্নত করব।’