শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ২৩:০০ পিএম
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩ ১১:১৯ এএম
আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করার জন্য অন্য কোনো দলের দরকার নাই, আওয়ামী লীগই যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।
তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত হেরে গেছেন। কেউ কি নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত জানতেন আজমত হারবেন? আজমতকে হারানো দরকার ছিল। তাই, আওয়ামী লীগের লোকেরাই জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষের লোকের চেয়ে অনেক বেশি কান্নাকাটি করেছে। হয়তো তাই আল্লাহও কবুল করেছন।
শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে শ্রীপুর শহরের হ্রদখলা এলাকায় বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গাজীপুর জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ ভুল হলো ড. কামাল হোসেনের নেত্বত্বে জোট গঠন করা এবং জোটে যাওয়া। এটা আমার জীবনের সেরা ভুল। আমি এ ভুল থেকে একটা শিক্ষা নিয়েছি যে, বিএনপিকে আরও ১০০ বছরে যতটা না চিনতে পারতাম, জোটে গিয়ে মাস তিনেক আগেই ততটা চিনতে পেরেছি। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। বিএনপি হচ্ছে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের দল। যদিও এখন বিএনপিতে খালেদা জিয়ার তেমন অবস্থান নেই। এখন সম্পূর্ণই হচ্ছে তারেক রহমানের দল।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জোটে গিয়েছিলাম। আমি ড. কামাল হোসেনকে নেতা বলে মানতাম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে যথেষ্ট পরিমাণ মান্য করেন। আমার মনে হয়েছিল তিনি আমার চেয়েও বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। সেজন্য আমি তার নেতৃত্বে ঐক্যজোটে গিয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার মাস খানেক পরে আমার মনে হয়েছে কামাল হোসেন নেতৃত্ব দেন না, শুধু সময় কাটান। উনি অত্যন্ত বড় মানুষ, মেধাবী মানুষ, পৃথিবীর বিখ্যাত আইনজ্ঞ। কিন্তু নেতা নন, গরীব মানুষের নেতা নন। সেজন্য আমি সবার পরে ঐক্যজোটে গিয়েছিলাম, সবার আগেও ঐক্যজোট ছেড়েছিলাম।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম বাঙালির এবং মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। কিন্তু আজকে সেই মানুষের কোনো অধিকার নেই। ২২ পরিবারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে আমরা সংগ্রাম করে ২২ হাজার অথবা ২২ লাখ ধনী মানুষের হাতে দেশটাকে দিয়ে দিয়েছি। এর কোনো প্রতিকার নেই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে সাড়ে তিন বছরে আমাকে সাতবার মন্ত্রী বানাতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান কতবার আমাকে মন্ত্রী বানাতে চেয়েছিলেন, তা বলে শেষ করা যাবে না। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। খালেদা জিয়া ২০০৫ সালে আমাকে বললেন, দেখেন আমি প্রধানমন্ত্রী ছিলাম এখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী কী কী করতে পারে তা আমি জানি। আপনি আমাদের সঙ্গে এলে আমাদের আর কোনো চিন্তা থাকে না। তারা প্রথমে আমাকে নির্বাচনে ২০টা সিট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পরে তিনি ২৫ সিটে গিয়ে ঠেকেছিল। বলেছিলেন, আপনার আরও যদি লাগে আপনি নেন, কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকেন। কিন্তু আমি যাইনি। তখন আমার মনে হয়েছিল যে, আমরা কারো সঙ্গে না গেলেও নির্বাচনে চারটা সিট পেয়ে যাবো। সেখানে একটা সিট পেয়েছিলাম। তারপরও আমি রাজাকারের দোসরদের সঙ্গে যাইনি।
বঙ্গবীর বলেন, ক’দিন যাবৎ দেশে আমেরিকার ভিসা নীতি নিয়ে নানা কথা চলছে। বিএনপি বলছে, এটা সরকারকে চাপে ফেলার জন্য আমেরিকা ভিসার রেসট্রিকশনটা দিয়েছে, যে নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করবে আমেরিকা তাকে ভিসা দেবে না। আমরা খুব একটা ভাল অবস্থার মধ্যে নেই। বিএনপি বলছে, এটা আওয়ামী লীগের ক্ষতি। আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপিকে সোজা করার জন্য আমেরিকা ভিসা রেসট্রিকশন দিয়েছে। কেউ একবারও ভাবে না, এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপির ক্ষতি নয়, ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের, ক্ষতি হচ্ছে বাঙালির, ক্ষতি হচ্ছে আমাদের জাতির। এতে আমাদের সম্মান নষ্ট হচ্ছে, এটা কেউ চিন্তা করে না। আমাদের জাতীয়ভাবে চিন্তা করতে হবে। সব দেশই যাকে পছন্দ নয় তাকে ভিসা দেয় না। এটা নতুন কি হল? তবে আমেরিকা যদি কারো বন্ধু হয়, তাহলে তার আর কোনো শত্রুর দরকার নেই। ওই আমেরিকা বন্ধুত্ব করেই সব শেষ করে দেয়।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, সংগঠন ছাড়া সংগ্রাম করার আর কোনো বিকল্প হাতিয়ার নেই। সংগঠন হচ্ছে সবার আগে। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেক বড় নেতা ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। কিন্তু তার কোনো সংগঠন ছিল না বলে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। এদেশের স্বাধীনতা এনে দিতে পারেননি। সংগঠন একটা মস্তবড় জিনিস। তাই তিনি তার দলীয় নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তাগাদা দেন।
জাহাঙ্গীরের মাকে নির্বাচিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর গাজীপুর সিটি চালাতে গিয়ে নানা রকমের অসুবিধা হবে। কারণ, একটা পদে তো দুইটা মানুষ বসতে পারে না। একটা পদের জন্য এক নেতা থাকেন, একজনই কর্তা থাকেন। কিন্তু গাজীপুরে জাহাঙ্গীর এবং তার মা সমান সমান কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন চালাবেন। আপনারা এর ফল এক বছরের মধ্যেই দেখতে পাবেন।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বীর প্রতীক, কেন্দ্রীয় সদস্য ফেরদৌস আলম, কেন্দ্রীয় যুব আন্দোলনের নেতা হাবিবুন নবী হোসেল, সিপিবি’ গাজীপুর জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন, ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক কাউসারুজ্জামান, যুব আন্দোলনের গাজীপুর শাখার নেতা মিঠুন সিদ্দিকী, কালিয়াকৈর উপজেলা কমিটির সভাপতি আলী হোসেন মন্ডল প্রমূখ।
আলোচনা সভার আগে সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক। সম্মেলন শুরুর আগে অডিটোরিয়ামের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।