পটিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ১৯:০২ পিএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ১৯:২৩ পিএম
পাশাপাশি খোঁড়া হয়েছে তিনটি কবর। পশ্চিম দিক থেকে প্রথম কবরে সমাহিত করা হয়েছে কোহিনুর আক্তারকে। পরের কবরটিতে তার বড় ছেলে ওহিদুল আলম মানিক, তার পরের কবরে ছোট ছেলে তৌহিদুল আলম মিরাজ। একে একে যখন স্ত্রী আর দুই ছেলেকে কবরে নামানো হয়, তখন শফিউল আলমের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পটিয়ার আকাশ। বারবার ছুটে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করছিলেন তিনি। কয়েকজন মিলেও তাকে ধরে রাখা যাচ্ছিল না।
শুক্রবার (২ জুন) বিকালে শফিউল যখন পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নে দুই সন্তানসহ প্রিয়তমা স্ত্রীকে শেষ বিদায় দিচ্ছিলেন, তখন তার মেয়ে সুমাইয়া চট্টগ্রামের বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাতে বেড়াতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান শফিউলের স্ত্রী কোহিনূর আক্তার ও দুই ছেলে। আহত হয় একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া।
জিরি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ লুৎফর রহমান চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শফিউল আমার ভাতিজা। সড়ক দুর্ঘটনায় তার সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল। স্ত্রী ও দুই ছেলে মারা গেল। চিকিৎসকরা বলেছে, মেয়েটে এখনও আশঙ্কামুক্ত না। শুক্রবার আসরের নামাজের পর তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর পাশাপাশি মা ও দুই ছেলেকে দাফন করা হয়েছে।’
২০০১ সালে আনোয়ারা উপজেলার কোহিনূর আক্তারের সঙ্গে পটিয়া উপজেলার মো. শফিউলের বিয়ে হয়। মাহিন্দ্রা গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মো. শফিউল।
তিনি বলেন, ‘বড় ছেলে ওহিদুল এ বছর স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল। সংসারের খরচ চালাতে টিউশনি করিয়ে আমাকে সাহায্য করত সে। ছোট ছেলে এবার কুসুমপুরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিল। দুই ছেলে নিয়ে আমার ও আমার স্ত্রীর অনেক স্বপ্ন ছিল। মাকে দেখতে আমার স্ত্রী বাপের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। ছেলের পরীক্ষার জন্য যায়নি। ছেলের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। পরে আবার বাপের বাড়িতে গেলে ছেলেমেয়েরা কোথায় খাবে, এই চিন্তা করে সে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। ছোট মেয়েটা হাসপাতালে ভর্তি। তাকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব?’
দুর্ঘনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পটিয়া থেকে আনোয়ারা যাওয়ার পথে পিএবি সড়কের ফাজিলহাট অংশে উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় কোহিনূর আক্তার। দুই ছেলেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদেরও মৃত ঘোষণা করেন। সুমাইয়া বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছে।
স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন শফিউল। আহাজারি করে বলছিলেন, ‘মেয়েটা ভাই, মা সবাইকে হারালো। তাকে কী বলে সান্ত্বনা দেব। ২৯ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি আমি। কোনো দিন আমার হাতে একটা সাপও মরেনি। আজ আমার সঙ্গে এটা কী হলো। আমি বিচার চাই।’
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা মুহাম্মদ হাসান বলেন, ‘নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তরের আবেদন করে। বাসটি (চট্টমেট্টো -জ ০৭৫৮) জব্দ করা হয়েছে। পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। তারা অভিযোগ না দিলে আমরা একটা অপমৃত্যু মামলা করব।’