× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজেটে বরাদ্দ দাবি

‘বর্ষায় হামরা ভাসি যাই, চাই তিস্তা প্রজেক্ট’

রংপুর অফিস

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ১৪:৩২ পিএম

আপডেট : ০১ জুন ২০২৩ ১৬:৫৪ পিএম

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে বৃহস্পতিবার ৫ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করেছেন উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষ। প্রবা ফটো

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে বৃহস্পতিবার ৫ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করেছেন উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষ। প্রবা ফটো

ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা। অফিস-আদালত, দোকানপাট থেকে রাস্তায় নেমে এসেছেন মানুষ। মাইকে বেজে উঠল জাতীয় সংগীত। থেমে গেল যানবাহনের চাকা। সবার হাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড। সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কে নেই গাড়ির হর্ন কিংবা মানুষের কোলাহল। স্তব্ধ চারদিক। এভাবে ৫ মিনিট সুনসান নীরবতা পালন করেছেন দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষ।

তাদের দাবি হলো, পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) পেস করার দিন বৃহস্পতিবার (১ জুন) বেলা ১১টা থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি পালন করেছেন রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার তিস্তাপাড়ের মানুষ।

এতে অংশ নিতে সকাল থেকে রংপুর নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে সাধারণ মানুষ। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায় নগরীর মডার্ন মোড়, লালবাগ, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, সিটিবাজার, কাচারিবাজার, মেডিকেল মোড়, সাতমাথাসহ নগরীর ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। প্রতিটি পয়েন্টে নদী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারী, সংস্কৃতি কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিকসহ নানা পেশার শত শত মানুষ অংশ নেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবারের বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানান তারা।

রংপুর সিটিবাজারের সামনে কর্মসূচিতে অংশ নেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আন্দোলনের অন্যতম নেতা রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, রংপুর মহানগর সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু, বাংলার চোখের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তানবীর হোসেন আশরাফী প্রমুখ।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারীর বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্ষাকালে হামরা তিস্তার বানোত ভাসি যাই, শুকান দিনোত পানি পাই না। পানি না পাওয়াতে হামার এত্তি আবাদ করা কঠিন হয়া যাওছে। পানি নিচে নামি যাইতোছে, শ্যাল মেশিন দিয়া পানি কম উঠতোছে। ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, স্কুল-মাদ্রাসা বাঁচাবার জন্তে হামার তিস্তা প্রজেক্ট চাই।’ 

পথচারী নগরীর আলমনগরের শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আশা করছি উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসনসহ পরিবেশ ও কৃষি বাঁচাতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার পাশে থাকবে।’

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। এবারের বাজেট সামনে রেখে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। আমরা বলতে চাই, তেলা মাথায় তেল আর নেড়ে মাথায় বাড়ি দেশে এমন নীতি চলতে পারে না। উত্তরাঞ্চলে বেকারত্ব বাড়ছে, নদী ভাঙন দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে আগামীতে দেশে মিঠাপানির সংকট দেখা দেবে। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ পানি সারা দেশে মিঠাপানি হিসেবে রপ্তানি করা যাবে। এবারের বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা না হলে বৈষম্যকৃত রংপুরের মানুষ বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘তিস্তা উত্তরের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা  পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্ষায় উজানের পাহাড়ি ঢলে বন্যা ও ভাঙনে নদীপাড়ের লাখ লাখ মানুষ আজকের রাজা কালকের ফকির হয়ে গেছে। দেশের মানুষের করের টাকায় পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৩ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা চীনা সরকার দেবে নাকি, ভারত দেবেÑ এসব উত্তরবঙ্গের মানুষ খুঁজবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন উত্তরের মানুষের ন্যায্য দাবি। তাই আজ প্রতীকী ৫ মিনিটের স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করা হলো। এ বাজেটে বরাদ্দ রাখা না হলে আগামীতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষকে নিয়ে এর চেয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে।’

উল্লেখ্য, তিস্তার পানির ন্যায্য হিসসা আদায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধন, সমাবেশ, লংমার্চ, রোডমার্চসহ নানা আন্দোলন করে আসছে। এ নিয়ে সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৯ অক্টোবর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শেখ হাসিনা সেতু এলাকা পরিদর্শন করেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন সরকার আগ্রহী উল্লেখ করে এ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে বলে জানান চীনের রাষ্ট্রদূত। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে সুখবর পাওয়া যায়নি। তাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৬ মে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গণসমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় স্তব্ধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা