× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাঁড়িভাঙ্গার মা

এহসানুল হক সুমন, রংপুর

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩ ১৪:৪৪ পিএম

আপডেট : ২৮ মে ২০২৩ ১৪:৪৪ পিএম

হাঁড়িভাঙ্গা আমের মাতৃগাছের সামনে আমজাদ হোসেন। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

হাঁড়িভাঙ্গা আমের মাতৃগাছের সামনে আমজাদ হোসেন। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

রংপুর খ্যাত হাঁড়িভাঙ্গা আমের জন্য। সুস্বাদু, আঁশহীন এ আম ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রাম থেকে এই আম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদারবাড়ির বাগানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধি ফুল ও সুস্বাদু ফল ছিল। এ আম বিক্রি করতেন খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের তমির উদ্দিন পাইকারের ছেলে নফেল উদ্দিন পাইকার। নফেল জমিদারের বাগানসহ অন্য চাষিদের আম বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন। ১৯৪৮-৪৯ সালের দিকে এ জমিদার বাগানের একটি আম অত্যন্ত সুস্বাদু, আঁশহীন, সুমিষ্ট ও দর্শনীয় হওয়ায় তিনি এর একটি কলম নিয়ে নিজ জমিতে রোপণ করেন।

বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি হওয়ায় শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার সুবিধার্থে একটি হাঁড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন তিনি। একদিন রাতে কে বা কারা ওই মাটির হাঁড়িটি ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে আমগাছটিতে প্রচুর সুস্বাদু আম হলে নফেল উদ্দিন পাইকার প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের আম খাওয়ান। আম সম্পর্কে তারা নফেল উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছটির নাম। এরপর নফেল উদ্দিনের কথার সূত্র ধরে আমটি ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম’ নামে পরিচিত লাভ করে। 

রংপুর নগরী থেকে তেকানী গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তেকানী গ্রাম সরেজমিন দেখা যায়, হাঁড়িভাঙ্গা আমবাগানের ছায়ায় ঘেরা গ্রামটি। গাছে গাছে ঝুলন্ত আম বাতাসে দোল খাচ্ছে। তেকানী গ্রামের মসজিদের পাশে রয়েছে হাঁড়িভাঙ্গার মাতৃগাছ। নফেল উদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন এখনও সেই গাছটি আগলে রেখেছেন। গাছটি তার বিশালকায় শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে আশপাশে। ডাল-পাতায় ঢেকে যাওয়া পুরো গাছে আম ধরেছে। অবাধ্য শাখা-প্রশাখা অন্যের জমিতে চলে যাওয়ায় অনেক ডালপালা কাটতে হয়েছে। মাতৃগাছটিকে আলাদাভাবে শনাক্তের জন্য গোড়ার চারদিক মাটি দিয়ে একটু উঁচু করে রাখা হয়েছে। গাছটি পুরোনো হওয়ায় শ্যাওলা ও পরগাছা জন্মেছে। হাঁড়িভাঙ্গা মাতৃগাছটির মূল কাণ্ডের উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট। এরপর মূল কাণ্ড থেকে মোটা ডালপালা গাছটির চারপাশে প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত।

আমজাদ হোসেন বাবার ব্যবসা ধরে রেখেছেন। তিনিও আম চাষ ও ব্যবসায় জড়িত। মাতৃগাছের নিচে বসে আমজাদ হোসেন বলেন, আমার বাবা ১৯৪৮-৪৯ সালের দিকে হাঁড়িভাঙ্গার এ গাছটি লাগিয়েছিলেন। প্রথম দিকে আমগাছটির তেমন গুরুত্ব ছিল না, তাই জঙ্গলের মধ্যে ছিল। পরবর্তীতে গাছটিতে যখন সুস্বাদু, মিষ্টি আমের ফলন হয়, তখন এ গাছের গুরুত্ব বাড়ে। পরে এ গাছের কলম নেওয়ার জন্য মানুষ আসতে থাকে। আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি অনেক কলম বিক্রি করেছি। 

তিনি বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করে লাখ টাকা উপার্জন হয়েছিল। এ আমের ফলন দেখে কলমের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তখন জোড়কলমের ব্যবস্থা ছিল। এখন তো গ্রাফটিং করা হয়। তখন আমি ৫০০ টাকা করে একেকটি কলমের চারা বিক্রি করেছি। কলমের মান অনুযায়ী দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতো। এখন সারা দেশে এ গাছ ছড়িয়ে পড়েছে। রংপুর বিভাগের আশার আলো হয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ। বর্তমানে তেকানীতে যারা মানুষের বাড়িতে থাকে, তারাও বাগানে আম কুড়িয়ে মৌসুমে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করে। গ্রামের ছেলেরা শুধু ক্যারেটে আম প্যাকিং করে দিনে ৮০০ টাকা আয় করে। যারা বড় বাগান করেছে, তারা কোটি টাকার ওপরে আয় করছে। আম দিয়ে ধনী-গরিব সবার রিজিকের ব্যবস্থা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মাতৃগাছটি সংরক্ষণের জন্য একাধিকবার ডিসি, ইউএনও, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও বিএসকে বলেছি। কিন্তু কেউ কোনো গুরুত্ব দেন না। অথচ এ গাছের কারণে উপজেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমি মাতৃগাছটি সংরক্ষণে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। আখিরারহাটের আমচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, তেকানীর গাছের মাধ্যমে বর্তমানে গোটা মিঠাপুকুর আমবাগানে ভরে গেছে। এটি আমাদের জন্য অনেক গর্বের। হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান করে উপজেলার সব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমরা চাই গাছটি সরকার সংরক্ষণ করুক। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শামীমুর রহমান বলেন, আমি নিজেও তেকানী গ্রামের ওই আমগাছটি ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছি। তবে এ গাছটি দিয়েই হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ ছড়িয়েছে- এ তথ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা