ইমরান হোসেন মনিম, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১১:৩৬ এএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৩ ১৩:৫৭ পিএম
রাজবাড়ী গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টসের কুটির শিল্পকারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা। প্রবা ফটো
রাজবাড়ীর একটি কুটির শিল্পকারখানায় তৈরি হচ্ছে ১০০টি পণ্য। এসব পণ্যের কাঁচামাল প্রধানত পাট, হোগলা পাতা, কলাগাছের ছোবড়া, ধানের খড়, কচুরিপানা ও কাশফুল। পরিবেশবান্ধব এই কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্তত দুই হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মরতদের বেশিরভাগই নারী। অর্থাৎ তারাই এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান চালিকাশক্তি। কারখানাটির নাম গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টস। জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়ায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে চলছে এই কুটির শিল্পকারখানার কার্যক্রম।
সূত্র বলছে, বছরে ৮ মিলিয়ন ডলার আয় করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী বছর থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়দের বেকার সমস্যা নিরসন বিশেষ করে নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টস। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
১ একর জমিতে ২০১২ সালে গড়ে তোলা হয়েছে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টস শিল্পকারখানাটি। ২০টি শেলাই মেশিন ও ৩০ জন শ্রমিক কর্মচারী দিয়ে কারখানাটির উৎপাদন শুরু করা হয়েছিল। বর্তমানে বিদেশের বাজারে এখান থেকে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকায় এর পরিধি আরও বেড়েছে। এখন কাজ করছেন ২ হাজার মানুষ।
পাটজাত দ্রব্য ছাড়া বাকি পণ্যগুলো অপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল থেকে তৈরি। এখানে তৈরি হচ্ছে পাপোশ, ফুলদানি, ম্যাট, ঝুড়ি, বাসকেট, শোপিচসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি ঘর সাজানো ১০০ ধরনের জিনিসপত্র, যা ইউরোপ, আমেরিকা, মিডলইস্ট, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও জাপানসহ ২৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
কারখানায় কর্মরত রাজিয়া বেগম বলেন, এখানে কাজ করে তারা পুরুষের পাশাপাশি বাড়তি আয় করে সংসার চালাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছেন। আবার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অর্থ সঞ্চয় করতে পারছেন। সব মিলিয়ে এখানে কাজ করে ভালো আছেন তিনি।
মোছাম্মৎ হালিমা বেগম নামে আরও এক নারী শ্রমিক বলেন, প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন এখানে। বাড়তি সময় কাজ করলে আরও বেশি অর্থ পান। বর্তমানে বাজারের দ্রব্যমূল্যে যে অবস্থা তাতে স্বামীর একার আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। এজন্য এখানে কাজ করে তিনি যে বাড়তি আয় করছেন এতে দুজনের আয়ে তাদের পরিবার, ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালো আছেন। এখানে কর্মরত রহিমা, শিখা বেগম, মিরা খাতুনসহ অনেক নারী কর্মী এখন সচ্ছল জীবনযাপন করছেন।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টসের এমডি হাকিম আলী সরদার বলেন, তারা নারী উন্নয়ন ও নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে প্রতিবন্ধী শ্রমিকদেরও। বর্তমানে বিশ্বমন্দার বাজারেও বছরে ৮ মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী বছর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্য রয়েছে। তবে রাস্তাঘাট ও বিদ্যুতের কিছু সমস্যা রয়েছে। এর সমাধান হলে তারা আরও ভালোভাবে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারতেন।
জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের পণ্যগুলো মানসম্মত হওয়ায় বিদেশের বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশসহ ২৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে পারলে আয় বাড়ার পাশাপাশি বেকার সমস্যারও সমাধান হতো।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, মানসম্মত পণ্য তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। অধিকাংশ নারী শ্রমিক হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি নারীর ক্ষমতায়নেও ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বিশ্বদরবারে দেশের পাটের চাহিদা কিছুটা হলেও বাড়বে। কারখানাটির উন্নয়নে যেকোনো সহযোগিতা দিতে আগ্রহী জেলা প্রশাসন।