শাহ আলম শাহী, দিনাজপুর
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ০৯:০৬ এএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৩ ১৪:০০ পিএম
নিজের কুকুরের খামার ‘ডগ হাউসে’ উদ্যোক্তা জাহিদ। প্রবা ফটো
দিনাজপুরে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে কুকুরের খামার দিয়েছেন জাহিদ ইসলাম সোহাগ নামে একজন যুবক। বিদেশি হরেক জাতের কুকুর পালনসহ প্রজনন করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অনলাইনে বিক্রি করায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা, সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা তার খামার থেকে কুকুর সংগ্রহ করছেন। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কুকুর লালন-পালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছেন সোহাগকে।
দিনাজপুর শহর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর নয়নপুর এলাকায় ‘ডগ হাউস’ নামে এই কুকুরের খামার। প্রায় সাড়ে ৮ বছর আগে শখের বশে সোহাগ প্রথমে একটি ও পরে দুটি বিদেশি কুকুর নিয়ে শুরু করেন এই খামারের যাত্রা। কুকুরের প্রথমে তিনটি ও পরে সাতটি বাচ্চা প্রজননের মাধ্যমে তার ভাগ্য খুলে যায়। অনলাইন বিপণনের মাধ্যমে তিনি শুরু করেন কুকুর বিক্রি। লাভের মুখ দেখায় তিনি শুরু করেন বিভিন্ন জাতের বিদেশি কুকুর সংগ্রহ ও প্রজনন প্রক্রিয়া।
জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, এখন তার খামারে আমেরিকান লাসা, টয় কোরিয়ান, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মান শেপার্ড, ব্ল্যাক শেপার্ড, উল্ফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ ৯ প্রজাতির ৩২টি কুকুর রয়েছে। প্রকারভেদে এসব কুকুর ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তিনি। বাণিজ্যিকভাবে কুকুর বিক্রিতে তার প্রতি বছর ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই কুকুরের খামার দেখাশোনা ও পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনজন শ্রমিক। এর মধ্যে এক শিশুশ্রমিকের বেশ ভক্ত কুকুরগুলো। এই শিশুশ্রমিকের সঙ্গে কুকুরগুলো খেলা করছে, ছুটছে, লাফিয়ে উপরে উঠছে, হ্যান্ডশেক করছে।
স্থানীয় মকবুল হোসেন বলেন, ‘কুকুরগুলো বেশ প্রভুভক্ত। সোহাগ ভাই ও তার লোকজন যা বলে কুকুরগুলো তাই শোনে। চুপ থাকতে বললে কুকুরগুলো মাথা নিচু করে বসে বা শুয়ে পড়ে। আর কোনো লাফালাফি করে না।’
সোহাগের কুকুরের খামার দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসে অনেক মানুষ। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকেই এভাবে কুকুরের খামার দিতে আগ্রহী হচ্ছেন।
নীলফামারী থেকে খামার দেখতে আসা হাসান আলী বলেন, কুকুরগুলো বেশ সুন্দর। দেখে ভালো লাগল। আমিও দুটি কুকুর নিতে চাই। ইচ্ছে আছে খামার দেওয়ার।
জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কুকুরের খামার গড়ে ওঠায় স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সজাগ রয়েছে। খামারটি নিয়মিত পরিদর্শন ছাড়াও কুকুর লালন-পালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘সতর্কতা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে খামারটি পরিচালিত হলে খামারি বেশ লাভবান হবেন। কোনোক্রমে যাতে রোগ-জীবাণু না ছড়ায় সেদিকে বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে সব সময়। কারণ খামারে হিংস্র জাতের কুকুরও রয়েছে।’
বিশ্বস্ত ও প্রভুভক্ত হওয়ায় কুকুরের প্রতি বেশ কদর রয়েছে মানুষের। সোহাগের এই কুকুরের খামার কর্মসংস্থানে অনেকের অনুপ্রেরণা হতে পারে।