× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গহিন পাহাড়ে যেভাবে সন্ধান মেলে ৩ মরদেহের

নুপা আলম, কক্সবাজার

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩ ১৭:৪৩ পিএম

আপডেট : ২৫ মে ২০২৩ ১৮:৩৫ পিএম

গত ২৮ এপ্রিল টেকনাফ থেকে নিখোঁজ হন ইউছুপ, রুবেল ও ইমরান।

গত ২৮ এপ্রিল টেকনাফ থেকে নিখোঁজ হন ইউছুপ, রুবেল ও ইমরান।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া এলাকায় অবস্থিত অরণ্যে ঘেরা একটি পাহাড়। পাশের কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পশ্চিম পাশ ধরে এগিয়ে গেলে আড়াই কিলোমিটার গহিনে মিলবে পাহাড়ের ঢালু। এই ঢালুতে বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে ছিল তিনটি মরদেহ। তাদের শরীরের মাংস গলিত হয়ে অনেকটা কংকাল হয়ে গেছে; দুজনের শরীর থেকে মাথাও ছিল বিচ্ছিন্ন।

বুধবার (২৪ মে) বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অভিযানে মরদেহগুলোর সন্ধান পায় পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র‍্যাব। তাদের খবরে সেখান থেকে এগুলো উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

যে কারণে অভিযান

গত ২৮ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে টেকনাফ গিয়ে নিখোঁজ হন তিন যুবক। তারা হলেন, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউছুপ, চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের রুবেল, কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়। স্বজনরা জানিয়েছেন, তিন যুবককে অপহরণ করা হয়েছে। পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। এর সূত্র ধরে ১৩ মে টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শফি আলম বেলাল নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাবের সহযোগিতায় একই ক্যাম্প থেকে আরাফাত নামে আরও একজনকে আটক করা হয়। আরাফাতের ফোনে পাওয়া যায় নিখোঁজ যুবকদের একজন রুবেলের ফোন নম্বর। 

টেকনাফ কেন গিয়েছিলেন ওই তিন যুবক

টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম জানান, আটক দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন ওই তিন যুবক ২৮ এপ্রিল তাদের কাছে এসেছিলেন। কোহিনূর নামে এক নারীকে দেখানোর কথা বলে রুবেলকে ডেকে আনেন শফি আলম। রুবেলের সঙ্গে ছিলেন ইউছুপ ও ইমরান। তাদের হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয় পাহাড়ে।

তিনি জানান, আটক ওই দুই রোহিঙ্গার তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার পাহাড়ে অভিযানে যায় পুলিশ ও র‍্যাব। সেখানে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মরদেহগুলো আসলে কাদের

র‍্যাব বলছে, উদ্ধার মরদেহগুলো নিখোঁজ তিন যুবকের বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার। তবে মরদেহগুলো পচে গলে যাওয়ায় এগুলো শনাক্ত করা কঠিন।

র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর মরদেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার পর শনাক্ত করা যাবে। এই ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনের তথ্য পেয়েছে র‍্যাব। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণসহ সব অপরাধ রোধে র‍্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

টেকনাফে পাহাড় ঘিরে অপহরণ চক্রের আস্তানা

গত কয়েক মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণ বেড়েছে। অপহরণ চক্র নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়েছে টেকনাফের দুই ইউনিয়নের পাহাড়। এগুলো হলো, বাহারছড়া ও হোয়াইক্যং এলাকার পাহাড়। গত সাত মাসে এই দুই এলাকায় পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে।

টেকনাফ থানা পুলিশের তথ্যমতে, এসব মামলার আসামি ৪৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩ জন। এসব ঘটনায় ২৩ জনকে অপহরণের তথ্য পাওয়া গেলেও প্রকৃত তথ্য ভিন্ন বলছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত আট মাসে টেকনাফে পাহাড়কেন্দ্রিক ৬৫ জন অপহৃত হয়েছেন। সর্বশেষ গত শনিবার পাঁচ লাখ টাকা পণ দিয়ে মুক্তি পায় পাঁচ রোহিঙ্গা শিশু। এর চার দিন আগে তাদের অপহরণ করা হয়। তবে গত সোমবার ২০ জন মুক্তিপণ ছাড়া ফিরে আসেন।

পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ কৃষক

রবিবার (২১ মে) নিখোঁজ হন কৃষক আলী হোসেন। তিনি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা থেকে নিখোঁজ হন। ওই দিন সকালে লেদার পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়াতে গেলে তাকে অপহরণ করা হয় বলে দাবি তার পরিবারের।

আলী হোসেনের ছোট ভাই কামাল হোসেন জানান, রবিবার লেদার পুরোনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়াতে যান। সেখানে তার কৃষিজমি আছে। ওই দিন বেলা তিনটার দিকে পরিবারের কাছে ফোন করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে অজ্ঞাত ব্যক্তি। টাকা দিলে বড় ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পরে ভাইয়ের সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেওয়া হয়। কামাল হোসেনকে আলী হোসেন তখন জানান, তিনি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হয়েছেন। এই খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে তাকে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ থানার ওসি মো. আবদুল হালিম জানান, হ্নীলা থেকে কৃষক অপহরণের বিষয়ে তার জানা নেই। কেউ থানায় অভিযোগও দেননি। তারপরও তিনি ঘটনার অনুসন্ধান করছেন।

পাহাড়ে সক্রিয় একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য বলছে, পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী। এর মধ্যে রয়েছে সালমান গ্রুপ, ছালে গ্রুপ, আবু আলা গ্রুপ ও নবী হোসেন গ্রুপ। এদের মধ্যে ছালে গ্রুপের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। অস্ত্র ও গুলিসহ এই গ্রুপের প্রধান হাফিজুর রহমান প্রকাশ ওরফে ছালে উদ্দীনসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রমতে, টেকনাফের দুর্গম পাহাড়কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীকে প্রায় সব সহযোগিতা করে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে এসব গোষ্ঠীকে আগেই তারা খবর জানিয়ে দেয়। অপহৃতদের পরিবারের কাছ থেকে সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন স্থানীয় সহযোগীরা। তা ছাড়া দুর্গম পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের খাবার সরবরাহসহ কাজ করে দেয় তারা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা