২০ জুন নামবে আম
মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম
গাছে গাছে দুলছে সুস্বাদু, আঁশবিহীন হাঁড়িভাঙ্গা আম। প্রবা ফটো
আগামী ২০ জুন বাজারে আসছে রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙ্গা আম। তবে এবার অনাবৃষ্টি ও ঝড়ে আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়নি। তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে এর আকারও হয়েছে ছোট। সেই সঙ্গে জ্যৈষ্ঠের শুরুতে দুই দফায় ঝড়ে গাছ থেকে পড়ে গেছে অনেক আম। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, খরা ও ঝড় উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুর জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান রয়েছে ১ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমিতে। বিগত বছরের চেয়ে এবার হাঁড়িভাঙ্গা আমের মুকুল বেশি এসেছিল। তাই কীটনাশক স্প্রে, সার ও সেচ প্রয়োগ করে মুকুল টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন চাষিরা।
তবে বৈশাখ মাসে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় বেশিরভাগ মুকুল থেকে আমের গুটি বের হয়নি। এরপর চাষিরা সার, সেচ দিয়ে গুটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ বছর রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রির ওপরে। তীব্র তাপপ্রবাহ ও সেচের অভাবে হাঁড়িভাঙ্গা আমের গুটিগুলো বড় হয়নি। ফলে পরিপক্ব মৌসুমে এবার ছোট আকারের আম বেশি পাওয়া যাবে বলে ধারণা কৃষকদের।
আগামী ২০ জুন হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সম্প্রতি চাষি ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা সভা করেছে। অপরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারজাত ঠেকাতে কঠোর মনিটরিং করার কথাও জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
রংপুর সদর উপজেলা থেকে শুরু করে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ, আখিরার হাট, মাঠের হাট, বদরগঞ্জের শ্যামপুর ঘুরে দেখা যায় গাছে গাছে ঝুলছে আম। রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন ফসলি জমির আইলে লাগানো হয়েছে আমের গাছ। বাদ পড়েনি বসতবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, পুকুরপাড়, বাড়ির উঠান। এখন গাছে গাছে দোল খাচ্ছে অপরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম।
এ বছর মিঠাপুকুরের আখিরার হাটে সাড়ে ১২ একর জমির হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান ১৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান। তার বাগানে রয়েছে ১ হাজার ৭০০ গাছ। হাঁড়িভাঙ্গা আমের মুকুল অনুযায়ী ফলন হয়নি তার বাগানে।
আনিসুর রহমান বলেন, ‘১৩ লাখ টাকা দিয়্যা বাগান নিছি। এরপর সার, ওষুধপাতি দিয়্যা মুকুল ধরি রাখবার চেষ্টা করছি। কিন্তু এইবার বৃষ্টি হয় নাই, সেই জন্তে মুকুল সউগ ঝরি গেইছে। আবার পানি না প্যায় আমের দানাও ছোট হইছে। এইবার মনে হয় লাভ হবার ন্যায়। বাজার ভালো থাকলে খরচা উঠি আসবে।’
আমচাষি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘উপজেলা থ্যাকি কইছে জুনের ২০ তারিখ থ্যাকি আম ছিঁড়বার পামো। পাকা আম না ছিঁড়লে হাঁড়িভাঙ্গার টেস্ট পাওয়া যায় না, আমের বদনাম হয়। সরকারের নির্দেশ যায় মানবার ন্যায় তার বিরুদ্ধে যেন অ্যাকশান নেয়। এলা শেষ সময় স্প্রে করি পোকামাকড় থ্যাকি গাছ বাঁচাইতোছি।’
সদর উপজেলার রূপসী এলাকার আম ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, এবার ১০ একর জমির বাগান নিয়েছি। এতে প্রায় ১২০০ গাছ রয়েছে। মুকুল দেখে অত্যন্ত খুশি ছিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড খরার কারণে মুকুল ও গুটি ঝরে গেছে। পরে ঝড় আরও ক্ষতি করে। এরপরও যে আম আছে সেগুলো টিকে গেলে লাভ হবে। হাঁড়িভাঙ্গা আম বিদেশে রপ্তানি করা গেলে আমরা অনেক লাভবান হতে পারতাম।
হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষের সম্প্রসারক আব্দুল সালাম সরকার বলেন, এ বছর মুকুল দেখে যেমন আমের ফলন প্রত্যাশা করেছিলাম তেমনটি হয়নি। খরার কারণে আমের আকার ছোট হয়ে গেছে। তবে উৎপাদন খুব খারাপ হবে না। সরকার নির্ধারিত সময়ের আগে যেন কোনো চাষি বা অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে আম বিক্রি না করে সে লক্ষ্যে প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা আম যেহেতু রংপুরের কৃষি অর্থনীতির একটি বড় ক্ষেত্র, তাই এ আম উৎপাদনে আমরা প্রতি বছরের মতো এবারও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। খরা ও ঝড় আম উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। শেষ মুহূর্তে আম টিকিয়ে রাখতে চাষিদের পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি ২০ জুন সুস্বাদু, আঁশবিহীন হাঁড়িভাঙ্গা আমে বাজার সয়লাব হবে।